কাউকে রেখে কেউ নয়, সিটিভুক্ত করলে একসঙ্গে করার দাবি

সিলেট সিটি করপোরেশনের লোগো

মানুষে মানুষে অটুট বন্ধুত্ব-বন্ধনের কত তো গল্প প্রচলিত। কিন্তু গ্রামে গ্রামে বন্ধনের এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সিলেট শহরতলির টুকেরবাজার ইউপির নয়টি গ্রাম। তারা কাউকে রেখে কেউ সিলেট সিটিভুক্ত হতে চায় না। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই নয়টি গ্রাম একই পঞ্চায়েতভুক্ত। এই পঞ্চায়েতের শতবর্ষী ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গ্রামবাসীরা ছিন্ন করতে নারাজ।

এই নয়টি গ্রাম হলো—শেখপাড়া, সাহেবেরগাঁও, চরুগাঁও, খালিগাঁও, হায়দরপুর, পীরপুর, শাহপুর-খুরুমখলা, টুকেরগাঁও ও গৌরীপুর (হিন্দুপাড়া-নোয়াগাঁও)। সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভুক্ত এই নয়টি গ্রামের সাতটি গ্রামকে সম্প্রতি সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক) অন্তর্ভুক্ত করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। নয়টি গ্রামের মধ্যে বাদ পড়ছে টুকেরগাঁও ও গৌরীপুর। এতে নয়টি গ্রামের ২০০ বছরের অবিচ্ছিন্ন সম্পর্কে চিড় ধরার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এই শঙ্কা কাটাতে তাঁদের দাবি, নয়টি গ্রামকে একসঙ্গে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

আজ শনিবার বেলা দুইটায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে ‘সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তি বাস্তবায়ন পরিষদ’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়েছে। এর আগে নয়টি গ্রামের বাসিন্দারা দলমত-নির্বিশেষে মানববন্ধন করে এ দাবি জানিয়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিধি বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গত মাসের প্রথমার্ধে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। গণবিজ্ঞপ্তিতে ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সিটি করপোরেশনকে প্রায় ৫৭ বর্গকিলোমিটারে উন্নীত করার প্রস্তাব রয়েছে। সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করতে যেসব এলাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে টুকেরবাজার ইউপির শেখপাড়া, সাহেবেরগাঁও, চরুগাঁও, খালিগাঁও, হায়দরপুর, পীরপুর ও শাহপুর-খুরুমখলা গ্রাম রয়েছে। সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে বাদ পড়েছে টুকেরগাঁও ও গৌরীপুর।

২০০ বছরের পঞ্চায়েতি সম্পর্ক বজায় রাখতে ৯টি গ্রামকে একসঙ্গে সিলেট সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সদস্যসচিব আইনজীবী ফারুক আহমদ। আজ শনিবার বেলা দুইটায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে।
প্রথম আলো

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সদস্যসচিব আইনজীবী ফারুক আহমদ। তিনি বলেন, ‘শতবর্ষ ধরে নয়টি গ্রাম নিয়ে একটি পঞ্চায়েত ও সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ আমরা। এই এলাকার মানুষ দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক নিয়ে বসবাস করছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে নতুন করে বিভাজন তৈরি হয়েছে। টুকেরগাঁও ও গৌরীপুর গ্রাম দুটি সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্বে পড়েছে। মৌজা হিসাব করায় এবং টুকেরগাঁও বাজারের পার্শ্ববর্তী এলাকা সিটি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় এ গ্রাম দুটিকে সিটিভুক্তির বাইরে রাখা হয়েছে। একে নয়টি গ্রামের ঐক্যবদ্ধ পঞ্চায়েতকে বিভক্ত করার অপপ্রয়াস হিসেবে মনে করছেন এলাকাবাসী। এতে এই নয়টি গ্রামের স্থিতিশীল সামাজিক ঐক্য অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গণবিজ্ঞপ্তিতে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রস্তাবিত এলাকা নিয়ে কোনো অভিযোগ, আপত্তি কিংবা পরামর্শ থাকলে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিলেট জেলা প্রশাসনে লিখিতভাবে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ১৭ আগস্ট জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আপত্তিপত্র দিয়ে ২৮ আগস্ট নয়টি গ্রামের বাসিন্দারা দলমত-নির্বিশেষে মানববন্ধন করেছেন। নয়টি গ্রামকে একসঙ্গে সিটি করপোরেশনভুক্ত করে ২০০ বছরের পঞ্চায়েতি ঐতিহ্য রক্ষায় সিটির একটি নতুন ওয়ার্ড গঠন করার দাবিতে একমত সবাই।

সিসিক সম্প্রসারণে প্রায় পাঁচ বছর ধরে আটকে থাকা প্রস্তাবটি নিয়ে গত বছরের ১৬ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর গত ৯ আগস্ট সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিধি বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে সিলেট জেলা প্রশাসন।

সংবাদ সম্মেলনে ‘সিলেট সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর আহ্বায়ক ও ৯ গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আবু ঈছা, ৯ গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সহসভাপতি হাজি জালাল উদ্দিন, সিলেট বিভাগ গণদাবি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, ১৮৭৮ সালে পৌনে দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছিল সিলেট পৌরসভা। ২০০২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে এর পরিধি বাড়ে। তখন সিটি করপোরেশনের আয়তন ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার করা হয়। ২০১৪ সালে আয়তন আরও বড় করার উদ্যোগ নেয় সিসিক। আকারের দ্বিগুণের বেশি আয়তনে সম্প্রসারণের একটি প্রস্তাব স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছিল। প্রায় পাঁচ বছর ধরে আটকে থাকা প্রস্তাবটি নিয়ে গত বছরের ১৬ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর গত ৯ আগস্ট সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিধি বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে সিলেট জেলা প্রশাসন।