কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পদ্মা ভরাট করে বালু পরিবহনের প্রস্তুতির নেওয়ার অভিযোগ

পদ্মা নদী ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে রাস্তা। তালাইমারি বালুঘাট, রাজশাহী নগর, ২৬ নভেম্বর
প্রথম আলো

রাজশাহী নগরের তালাইমারী বালুঘাটের জন্য পদ্মা নদী ভরাট করা হচ্ছে। গত বছর এই কাজ করেছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা। এবার নদী ভরাট করছেন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রজব আলী। তিনি এবার রাজশাহীর দিয়াড়খিদিরপুর ও চরশ্যামপুর বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন।
রাজশাহী নগরের তালাইমারী ঘাট থেকে খানিকটা দূরে পদ্মা নদীর চর পড়েছে। ওই চরের পরে (দক্ষিণে) নদীর মূল ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। ওই নদীপথে নৌকায় করে বালু নিয়ে এসে চরে ফেলা হচ্ছে। সেখানে তালাইমারী বালুঘাটে সরাসরি ট্রাকে করে বালু আনতে ঘাট ও চরের মাঝের জায়গায় রাস্তা তৈরি করতে হবে। ইতিমধ্যে নদীর বাঁ তীর থেকে ইট ও কংক্রিটের বর্জ্য ফেলা শুরু করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার থেকে নদীর মধ্যে রাস্তা তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটায় গিয়ে সেখানে কোনো শ্রমিক পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় কয়েকজন জানান, গত বছরও একইভাবে নদী ভরাট করা হয়েছিল। এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের মুখে গত বছর প্রশাসন তালাইমারী ঘাট দিয়ে বালু তোলা বন্ধ করে দিয়েছিল। ইজারাদারকে রাস্তা অপসারণ করে নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিন্তু আবারও সেই কাজ করা হচ্ছে।

কয়েকজন নারী ও পুরুষ নদীতে গোসল করছিলেন। তাঁরা বলেন, নদীর মূল ধারা এখান থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। তাঁরা ঘাটের কাছে যেটুকু পানি আছে, তাতেই গোসল ও কাপড়চোপড় ধোয়ার কাজ করেন। এই রাস্তা দিয়ে বালু তোলা শুরু হলে তারা এখানে গোসল করতে পারবেন না। এখানে জনসমাগম হবে। সব সময় ট্রাক যাতায়াত করবে। ধুলাবালি উড়বে।
জানতে চাইলে ইজারাদার ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রজব আলী বলেন, ‘বালু তুলে ঘাটে নিয়ে আসার জন্য একটা রাস্তা তৈরি করছি। সেখানে এখন নদী নেই। আরএস খতিয়ানে রাস্তা হিসেবেই উল্লেখ রয়েছে। কোনো অনিয়ম করছি না।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রাজশাহীর সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বলেন, পানি থাকুক আর না থাকুক, নদীর জায়গায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না। এটা দেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। এ আইনে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নদী রক্ষা কমিশনের জেলা ও বিভাগীয় কমিটি ব্যবস্থা নিতে পারে। জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিটির সভাপতি বিভাগীয় কমিশনার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নজরুল ইসলাম বলেন, এবার শুধু দিয়াড়খিদিরপুর ও চরশ্যামপুর বালমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে। তালাইমারী ঘাট দিয়ে বালু তোলার কথা নয়। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।