কাজ নেই, দিশেহারা অভাবী মানুষ

তিস্তার ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের পানিয়ালের ঘাট এলাকায় নদীতে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছেন গ্রামবাসী। গত বুধবার দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
তিস্তার ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের পানিয়ালের ঘাট এলাকায় নদীতে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছেন গ্রামবাসী। গত বুধবার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

শহর-গ্রামে কাজ নেই। কিন্তু চরাঞ্চলে? কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার বাসিন্দা আবদুল হামিদ ভেবেছিলেন, তিস্তার চরাঞ্চলে নিশ্চয়ই কাজের একটা ব্যবস্থা হবে। সে জন্য তিনি সাতসকালে বাড়ি থেকে পশ্চিমে চার কিলোমিটার হেঁটে থেতরাই বাজারে গিয়েছিলেন জীবিকার সন্ধানে। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, নদীতে পানি বেড়েছে। চরাঞ্চলের নিচু জমির বাদামখেত তলিয়ে গেছে। পাটখেত তলিয়ে গেছে। কাজ নেই।

গত বুধবার দুপুরে কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভা থেকে বুড়ি তিস্তা নদীর পথ ধরে থেতরাই ইউনিয়নে যাওয়ার পথে আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা হলো। তখন তিনি কাঁধে ব্যাগ ও হাতে ছাতা নিয়ে একই পথে বাড়ি ফিরছিলেন। ততক্ষণে পূর্বাকাশের সূর্য মধ্যাকাশে চলে গেছে।

আবদুল হামিদ জানালেন, তাঁর বাড়ি উলিপুর পৌরসভার পশ্চিম নাওডাঙ্গা গ্রামে। তাঁর ছেলে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে জোগালির কাজ করেন। কিন্তু বর্তমানে কাজ বন্ধ। বাড়িতে খুব অভাব। সে জন্য তিনি কাজ খুঁজতে বের হয়েছেন। জানালেন, পৌরসভা থেকে একটি রেশন কার্ড পেয়েছেন। কিন্তু আট সদস্যের পরিবার তাতে চলে না।

গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার উলিপুর উপজেলার কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক, চা-দোকানি, মুদিদোকানি, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, করোনাকালে উলিপুর উপজেলায় কাজের তীব্র সংকট চলছে। তাঁদের কষ্টে দিন কাটছে।

করোনায় আক্রান্ত ১৯
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে, উলিপুর উপজেলায় শনিবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৩ জন। হোম আইসোলেশনে আছেন ৪ জন। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে আছেন ১ জন। গত ২৭ এপ্রিল উলিপুরে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জফেরত রিকশাচালক। বাড়ি উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের নয়াগ্রামে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র রায় জানান, করোনায় আক্রান্তদের বেশির ভাগ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন। তাঁদের সংক্রমণে স্থানীয়ভাবে চারজন আক্রান্ত হয়েছেন।

গত তিন দিন সরেজমিনে উলিপুর পৌরসভা ও ১৩ ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দোকানপাট খোলা দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে চা-পানের দোকানগুলোতে লোকজনের আড্ডা, করোনা নিয়ে সচেতনতা কম। বেশির ভাগের মুখে মাস্ক নেই। উলিপুর-দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন হাটে অনেক লোকসমাগম দেখা গেল। এসব হাটে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। তবে উলিপুর বাজার ও কুড়িগ্রাম-উলিপুর সড়কের পাশের দোকানগুলো বিকেল পাঁচটার মধ্যে বন্ধ করতে দেখা গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাইদুল ইসলাম জানান, করোনা পরিস্থিতিতে হাসপাতালে সাধারণ রোগী কমে গেছে। বহির্বিভাগে এখন প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন রোগী আসছেন। করোনার আগে রোগীর সংখ্যা ছিল দুই থেকে আড়াই শ। তবে স্থানীয় বাসিন্দা সুরুজ আলী বলেন, করোনায় আতঙ্কের কারণে মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া হাসপাতালে যাচ্ছেন না।

বুধবার সকালে উলিপুর পৌরসভার পূর্ব নাওডাঙ্গা গ্রামে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের দুই মাঠকর্মীকে খোঁজখবর নিতে দেখা যায়। বৃহস্পতিবার সকালে পান্ডুল ইউনিয়নের কাগজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মা ও শিশুদের জন্য যত্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী ৩৫ জন দলনেতাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন ব্র্যাকের কমিউনিটি ফেসিলেটর রাশেদা বকসী। তিনি জানান, তাঁর আওতায় তিন ওয়ার্ডে সুবিধাভোগী নারী সদস্য আছেন ৫৩৮ জন। তাঁদের মা ও শিশুর পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শসহ করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে।

অভাব বাড়ছে
উলিপুর কুড়িগ্রাম জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা। ১৩ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা মিলে উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। উলিপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের জীবিকা কৃষিনির্ভর। প্রায় এক লাখ লোক কাজ করেন দেশের বিভিন্ন এলাকায়। বাকিরা স্থানীয়ভাবে নানা পেশার সঙ্গে যুক্ত।

করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে এসব মানুষের অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ। মঙ্গলবার বিকেলে উলিপুর থেকে আট কিলোমিটার পূর্বে হাতিয়া ইউনিয়নের পুরোনো অনন্তপুর হাটে কথা হয় গোলজার হোসেনের সঙ্গে। তিনি রামরামপুর চড়ুয়াপাড়া গ্রাম থেকে এসেছিলেন বাঁশ বিক্রি করতে। তাঁর ছেলে ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিন মাস ধরে কাজ বন্ধ। টাকা পাঠাতে পারছেন না। তাই তিনি বাঁশ কেটে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন।

অনন্তপুর হাটের আশপাশের সড়কগুলো দিয়ে যেতে এমন অসংখ্য অভাবী মানুষের দেখা মেলে। তাঁরা হাঁস-মুরগিসহ অভাবের তাড়নায় বাড়ির নানা কিছু বেচে দিচ্ছেন। হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দেখা গেল, বাজার করা ব্যাগে করে অ্যালুমিনিয়ামের পুরোনো তার বেচতে যাচ্ছেন মিয়াজীপাড়া গ্রামের ছাবিদুর রহমান। জানালেন, তিনি ভাঙারি ব্যবসা করেন। তিন মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ। এক কেজি পুরোনো তার বাড়িতে জমা ছিল। সেগুলো বেচে চাল-ডাল কিনবেন।

বেলা শেষের হাট ধরতে হাতিয়া ৪ নম্বর ইউনিয়নের ভাঙ্গামাল্লি গ্রামের রফিকুল ইসলামকে ডান হাতে একটি হাঁস নিয়ে জোরে হাঁটতে দেখা যায়। তিনি ঢাকায় রিকশা চালাতেন। এক মাস আগে এসেছেন। জানালেন, এরই মধ্যে তাঁর তিন হাজার টাকা ঋণ হয়েছে। পরিবার নিয়ে চলতে পারছেন না।

বুধবার বিকেলে উলিপুরে গরুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, মাঠভর্তি গরু নিয়ে বিক্রেতা দাঁড়িয়ে আছেন। বাইরের ক্রেতা নেই। হাট ইজারা কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, বিপদগ্রস্ত মানুষ গরু-ছাগল বিক্রি করতে আসছেন, দাম কম।

>

উলিপুরে কাজের তীব্র সংকট। কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় শ্রমজীবীরা অনিশ্চয়তায়।

করোনাকালে এখানকার অর্থনীতি নিয়ে খানিকটা ধারণা দিলেন বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের দলন গ্রামের কৃষিশ্রমিক জয়নাল মিয়া। বললেন, সাধারণত আউশ ধান ওঠার পর এলাকায় কাজ থাকে না। তখন কৃষিশ্রমিকেরা কাজের জন্য বিভিন্ন এলাকায় যান। কিন্তু এবার হয়েছে উল্টো। শ্রমজীবীরা এলাকার বাইরে যেতে পারেননি বরং যাঁরা বাইরে কাজ করতেন, তাঁদের ফিরে আসতে হয়েছে। ফলে আয় কমেছে। অভাব বেড়েছে।

ক্ষেতমজুর সমিতির উপজেলা কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, উলিপুরের অর্ধেক মানুষ শ্রমজীবী। দিন আনে দিন খায়। এভাবে ছয় মাস চলতে থাকলে সবাই সর্বস্ব হারাবেন।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল কাদের দাবি করেন, কুড়িগ্রাম এমনিতেই দরিদ্র এলাকা। কিছুদিন আগে আউশ ধানের মৌসুম শেষ হওয়ায় অধিকাংশ মানুষের অবস্থা ভালো আছে।

কাজে ফিরতে পারছেন না
উলিপুরে কৃষিকাজের বাইরে তেমন কোনো কাজের সুযোগ নেই। তার ওপর বড় নদ-নদী ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলার মধ্যে পড়েছে আট ইউনিয়নের বড় অংশ। বেগমগঞ্জ ও সাহেবের আলগা সম্পূর্ণ নদীর মধ্যে। প্রতিবছর নদীভাঙনের শিকার হন কয়েক হাজার মানুষ। এসব মানুষের বেশির ভাগ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে পোশাক কারখানায় কাজ করেন। এ ছাড়া রাজমিস্ত্রি হিসেবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামে কাজ করেন এ অঞ্চলের বহু মানুষ।

উলিপুরের সব এলাকাতেই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামফেরত শ্রমজীবীদের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁরা করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ-এপ্রিলে বাড়িতে এসেছেন। লকডাউন ওঠার পর অনেকে কর্ম এলাকায় ফিরে গেছেন। অনেকে এখনো কাজে ফিরতে পারছেন না।

তবে উলিপুর-৩ আসনের সাংসদ অধ্যাপক এম এ মতিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ কর্মজীবী কর্ম‌ক্ষেত্রে চলে গেছেন। তারপরও করোনার কারণে বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা পেশাজীবী সমস্যায় পড়লে তাঁদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।

উলিপুর উপজেলা থেকে পশ্চিমে-দ‌ক্ষিণে ১০ কিলোমিটার দূরে বজরা ইউনিয়ন। সেখানকার ১ নম্বর কালপানি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ লোক ফেনীতে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাফফর আলীও ঠিকাদারি করেন ফেনীতে। বুধবার বিকেলে সেখানে দেখা হয় ফেনীফেরত কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। তাঁদের একজন ওবায়দুল ইসলাম জানান, তাঁরা ১২৭ পরিবার রাজমিস্ত্রি। করোনার প্রথম দিকে এসেছেন। কয়েক দিন আগে অর্ধেকের বেশি চলে গেছেন। সেখানে কাজ শুরু হয়নি। সে জন্য অন্যরা যাচ্ছেন না।

বজরা ইউনিয়নের দ‌ক্ষিণ দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত হয়ে চিলমারীতে গিয়ে মিশেছে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে। ইউনিয়নের খামার বজরা, বাবুরহাট, চাঁদনীবাজার এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ি থেকে একজন-দুজন করে বাড়ির বাইরে কাজ করেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুরহাটে একটি ছোট গালামাল দোকানের সামনে কথা হয় কয়েকজন পোশাককর্মীর সঙ্গে। তাঁরা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি টেক্সটাইল মিলে কাজ করতেন। কারখানা বন্ধ থাকায় তাঁরা কাজে ফিরতে পারছেন না।

কাজের সন্ধানে চার কিলোমিটার হেঁটে থেতরাই বাজারে গিয়েছিলেন কুড়িগ্রাম পৌরসভার বাসিন্দা আবদুল হামিদ। কাজ না পেয়ে ফিরে আসতে হয় তাঁকে। গত বুধবার দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
কাজের সন্ধানে চার কিলোমিটার হেঁটে থেতরাই বাজারে গিয়েছিলেন কুড়িগ্রাম পৌরসভার বাসিন্দা আবদুল হামিদ। কাজ না পেয়ে ফিরে আসতে হয় তাঁকে। গত বুধবার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

উলিপুর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যে পড়েছে উলিপুরের সাহেবের আলগা ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। সেখানকার গুড়িবাড়ী চরের বাসিন্দা বাদশা মিয়া জানান, তাঁদের চরে অন্তত ৫০০ পরিবারের বাস। প্রায় ১০০ পরিবারের ছেলেরা ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেন। করোনার কারণে এসব পরিবার সংকটে পড়েছে।

উত্তর পান্ডুল এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, তাঁদের এলাকার বেশির ভাগ লোক রাজমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি ও কৃষিশ্রমিক। প্রতিটি বাড়ি থেকে একজন করে বাইরে কাজ করতে যান। তিনি নিজেও এ সময় রাজশাহীতে গরুর ফার্মে কাজ করতে যেতেন। কিন্তু এবার কেউ যাননি।

তবকপুর ইউনিয়নের বংশীপাড়া গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির একজন-দুজন সদস্য ঢাকা, চট্টগ্রামে কাজ করেন। সেখানকার সাধন চন্দ্র রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ করেন চট্টগ্রামে। তিনি জানান, তাঁরা একসঙ্গে এসেছিলেন ২০-২৫ জন। গেছেন ২-৩ জন।

উলিপুর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের দলন গ্রামের লোকমান, জাহের আলী, খলিলসহ ১৫-২০ সদস্যের একটি দল রিকশা চালাত ঢাকার মোহাম্মদপুরে। তাঁরা সবাই এখন বেকার। লোকমান বলেন, ‘ঢাকায় যেতে মন সায় দেয় না। ভয় লাগে। এদিকে গ্রামে কাজ নেই। কী করি খাই!’

উলিপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামল চন্দ্র কাজ করেন সিরাজগঞ্জের একটি টেক্সটাইলে। তিনি জানান, পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শতাধিক ব্যক্তি সেখানে কাজ করেন। কারখানা বন্ধ থাকায় কেউ যাননি। বাড়িতে বেকার বসে আছেন। তবে কারুপণ্য উলিপুর শাখার ৭০০ কর্মী মে মাসের শেষ সপ্তাহে কাজে যোগ দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) রি-ম্যাপ প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রামের মানুষের ওপর অভিবাসন নিয়ে কাজ করছে। প্রকল্পটির জেলা প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রুকুনুজ্জামান জানান, করোনা পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে ৫৪ হাজার লোক এসেছিলেন। উলিপুরে এসেছিলেন ১১ হাজার। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৭ হাজার শ্রমজীবী।

কুড়িগ্রামের লেখক ও গবেষক নাহিদ হাসান বলেন, স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি না হওয়ায় এখানকার শ্রমজীবীদের বেশি অনিশ্চয়তায় পড়তে হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ছোট ও মাঝারি শিল্প গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে অধিক মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে। এ ছাড়া কাঁচামালভিত্তিক গৃহশিল্প গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ ও সুদমুক্ত ঋণদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

কিস্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য বাতায়ন অনুযায়ী, উলিপুরে ২৬টি এনজিও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্যমতে, সমবায়ভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করছে ৯৪টি প্রতিষ্ঠান। করোনা পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের কিস্তি আদায় বন্ধ থাকলেও ১ জুন থেকে আবার শুরু হয়েছে। এতে ঋণগ্রহীতাদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম সপ্তাহে তাঁরা কিস্তি না দিলেও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দিচ্ছেন। হাতে টাকা নেই। ধারদেনা করেও কিস্তি দিতে হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সন্ন্যাসীতলা কেন্দ্রে কিস্তি দিতে যাচ্ছিলেন দীপু রায়। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ব্যুরো বাংলাদেশ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ঋণ করেছেন। জানালেন, আদায়কারী কিস্তি পরিশোধ করতে অনুরোধ করেছেন। সে জন্য ১ হাজার টাকা ধার করে ৯২৫ টাকা দিতে যাচ্ছেন। আদায়কারী অবশ্য দাবি করেন, কোনো জোর করা হচ্ছে না। যাঁরা পারছেন, কেন্দ্রে এসে দিচ্ছেন।

একই কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছিলেন সদস্য বিনোদিনী রায়। তিনি করোনাভাইরাসের আগে ৪০ হাজার টাকা ঋণ শোধ করেছেন। ডিপিএসসহ সঞ্চয় জমা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা। গিয়েছিলেন ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে কথা বলতে। কিন্তু আদায়কারী তাঁকে ফেরত পাঠালেন। বিনোদিনী বলেন, তাঁর স্বামীর কাজ নেই। টাকা তুলে রিকশা কিনবেন। কিন্তু এনজিও টাকা দিচ্ছে না।

এ বিষয়ে ব্যুরো বাংলাদেশের উলিপুর শাখার ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘ঋণ আদায়ের হার বর্তমানে খুব কম। একটি কেন্দ্রে ৫০ জন সদস্য থাকলে ১০ জন দিতে পারছেন। বাকিরা দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় একটু স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লেনদেন কম করছি।’

উলিপুর থেকে ১৩ কিলোমিটার পশ্চিমে তবকপুর ইউনিয়নের দ‌ক্ষিণ ওমানন্দ বংশীপাড়া। বুধবার সন্ধ্যার আগে আগে সেখানে একটি চা-পানের দোকানের সামনে কথা হয় স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে। চা-দোকানি বিমল চন্দ্র মোহন্ত জানান, তিনি আশা, এসএফ ও ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে অন্তত ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। দুই সপ্তাহ থেকে কিস্তি শুরু হয়েছে। আদায়কারীরা কম-বেশি করে দিতে বলেছেন। ‘কিন্তু দোকান চলে না। ক্যামনে দেই।’

পবিত্র চন্দ্র নামে একজন কৃষিশ্রমিক বলেন, তিনি দিনমজুরি ছাড়াও জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। কিন্তু জমি চাষ করে তাঁর লোকসান হয়েছে। চারটি এনজিওতে দেড় লাখ টাকার মতো ঋণ হয়েছে তাঁর। করোনাকালে কীভাবে কিস্তি শোধ করবেন, তা নিয়ে চি‌ন্তিত তিনি।

বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএসের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির উপজেলা ব্যবস্থাপক আবদুল গণি বলেন, উলিপুর উপজেলায় তাঁদের তিন-সাড়ে তিন হাজার গ্রাহক আছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য না থাকায় তাঁরা কষ্টে আছেন। অনেকের চাকরি নেই। ফলে ৪০ শতাংশও ঋণ আদায় হচ্ছে না। যাঁরা দিতে পারছেন, দিচ্ছেন। চাপ দেওয়া হচ্ছে না।

আশার উলিপুর শাখার ব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহিম জানান, উপজেলায় তিন শাখা মিলে তাঁদের ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ৭ হাজার ৫০০। বেশির ভাগ সদস্য সঞ্চয় ও ডিপিএস ফেরত নিচ্ছেন। যাঁদের কিস্তি শোধ হয়েছে, তাঁরা নতুন করে ঋণ নিচ্ছেন।

জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি এনামুল হক চৌধুরী বলেন, কর্মসংস্থানের অভাবে কুড়িগ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা আগে থেকেই খারাপ। তার ওপর নদীভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ জেলায় বেশি। এ অবস্থায় এনজিওর কিস্তি নেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা উচিত।

শহরে দারিদ্র্য বেড়েছে
উলিপুর পৌরসভার মোট ভোটার ৪৬ হাজার। জনসংখ্যা ১ লাখের কাছাকাছি হবে বলে জানালেন পৌর মেয়র। এসব মানুষের মধ্যে অর্ধেক বাস করেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। তাঁদের আয় মূলত শহরকেন্দ্রিক। বাজারে চায়ের দোকান, পানের দোকান, মুদিদোকান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা।

করোনাভাইরাস ও লকডাউনের কারণে তাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উলিপুর পৌরসভার সামনের গলিতে কাঁচামালের দোকান করেন জুয়েল মিয়া। তিনি জানান, ব্যবসা বন্ধ থাকায় তিনি পুঁজি খেয়ে ফেলেছেন। এক মাস আগে ব্র্যাক থেকে নতুন করে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আবারও ব্যবসা শুরু করেছেন।

উলিপুর পৌরসভার নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করেন আবদুল করিম। তিন মাস থেকে বেতন পান না। গেল সপ্তাহ থেকে তিনি পৌরসভার সামনের গলিতে কাঁচামালের দোকান করা শুরু করেছেন। পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান পাটের ব্যবসা পুনরায় চালু করতে উলিপুর হাটে গরু বেচতে এসেছেন। তিনি বলেন, গত তিন মাসে ১১ হাজার টাকা ধারদেনা হয়েছে। কিস্তি দেওয়া লাগে। গরু বেচা ছাড়া উপায় নেই।

উলিপুর বণিক সমিতির সভাপতি সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে জানান, উলিপুর বাজারে দোকানপাট আছে ১ হাজার ২০০। তার মধ্যে ক্ষুদ্র ও অল্প পুঁজির ব্যবসায়ী আছেন ৮০০। করোনাভাইরাসের কারণে তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়েছেন।

উলিপুর পৌরসভার মেয়র তারিক আবুল আলী চৌধুরী জানান, তাঁর বাড়িতে প্রতিদিন সাহায্যের জন্য দেড় থেকে দুই শ অভাবী মানুষ ভিড় করছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক না হওয়ায় শহরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে দরিদ্ররা
উলিপুর উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ২৬৮টি। কিন্ডারগার্টেন স্কুল আছে শতাধিক। সব মিলে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী ৫৩ হাজার। নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করছেন ৩৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। ৫৫টি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী আছেন ১৫ হাজার।

সরেজমিনে উলিপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নে দিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ফুটবল, ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলা নিয়ে ব্যস্ত। তারা সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব মানছে না। তবে শহরের শিক্ষার্থীদের করোনা নিয়ে কিছুটা সতর্ক থাকতে দেখা গেছে।

উলিপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক শাহ্‌ জানান, তাঁদের শিক্ষার্থীদের সংসদ টেলিভিশন দেখে পাঠদান করাতে অভিভাবকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলার চারজন শিক্ষক ফেসবুক লাইভ ও ইউটিউবের মাধ্যমে পাঠদান করাচ্ছেন।

তবে উত্তর পান্ডুল গ্রামের অভিভাবক নুরনাহার বেগম বলেন, সংসদ টেলিভিশন ও অনলাইনে পাঠদানের কথা বলা হলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের। তাঁদের বাড়িতে টিভি নেই, ভালো মোবাইল সেট নেই। তারা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের নদের চর বাগুড়ায় ৭৮ জন শিক্ষাবঞ্চিত শিশুকে শিক্ষা দিচ্ছিল একটি চ্যারিটি সংগঠন। সমন্বয়ক মারুফ আহমেদ জানান, চরাঞ্চলে এমনিতেই শিক্ষা-সংস্কৃতি তেমন নেই। এখন করোনার কারণে পাঠদান বন্ধ থাকায় নতুন করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা কঠিন হবে।

প্রান্তিক মানুষের দিকে নজর কম
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজ-উদ-দৌলা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে উলিপুর উপজেলায় ৩৮১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। নগদ টাকা বরাদ্দ এসেছে ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ১০০ টাকা। এ ছাড়া শিশুখাদ্যের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা বরাদ্দ এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে মাথাপিছু আড়াই হাজার করে টাকা বরাদ্দে ১৭ হাজার ১০৬ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে।

কিন্তু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রান্তিক মানুষ এসব সুবিধা খুব বেশি পায়নি। উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর কুমারপাড়ায় প্রায় ২০টি পরিবার আছে। তারা মাটির তৈজসপত্র তৈরি করে। করোনার কারণে তাদের কাজ বন্ধ। কিন্তু তারা কোনো ত্রাণসহায়তা পায়নি।

থেতরাই ইউনিয়নের হারু নেকড়া গ্রামে জেলে পরিবার আছে ৫০ থেকে ৬০টি। নদীতে এখন মাছ ধরা পড়ছে কম। ফলে তাদের দিন যাচ্ছে কষ্টে। সেখানকার সুখবালা রানী বলেন, ‘অন্য পাড়ায় চাল-ডাল দেওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু আমাদের পাড়ায় কেউ কিছু দেয়নি।’ তবে পান্ডুল ইউনিয়নের কাগজীপাড়া জেলেপল্লির জোবেশ্বর দাস জানান, তাঁরা ৩২ পরিবারের মধ্যে কেউ কেউ ত্রাণ পেয়েছেন। হাতিয়া ইউনিয়নের সীমানা লাগোয়া বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে পূর্ব আঠার পাইসা জেলেপাড়ায় ২০ পরিবারের বাস। সেখানকার বাসিন্দা শান্তিবালা অভিযোগ করেন, দুই ইউনিয়নের শেষ সীমানার জন্য তাঁদের কেউ কিছু দেয় না।

করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি ত্রাণ বিতরণেও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নে ত্রাণের চাল চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ১০ কেজি চালের জায়গায় ৫-৭ কেজি করে পেয়েছেন অভাবীরা।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার বলেন, ত্রাণ বণ্টন ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে নানা অভিযোগ উঠেছে। জনপ্রতিনিধিরা সঠিকভাবে বিতরণ করলে এমন সমস্যা হতো না।

নদীভাঙন নিয়ে আতঙ্ক
উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের পানিয়ালের ঘাট এলাকায় ৩০০ অধিবাসী তিস্তার ভাঙনের মুখে পড়েছেন। স্থানীয় মোজাম্মেল হক জানান, মূল তিস্তা থেকে একটি ক্ষীণ ধারার সৃষ্টি হয়েছে। এটি থেতরাইয়ের গোড়াই পিয়ার থেকে ২ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে আবারও মূল মোহনায় ফিরেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান জানান, গত দুই বছরে এখানকার তিন শতাধিক পরিবার নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে। তিস্তায় পানি বৃদ্ধি ও ভাঙন অব্যাহত থাকায় এখনো আড়াই শতাধিক পরিবারের লোকজনের চোখে ঘুম নেই। তাঁরা ভাঙন আতঙ্কে আছেন। স্থানীয়রা বাঁশের পাইলিং করে বালুর বস্তা, গাছের ডাল ও বাঁশ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন।

উলিপুর-৩ আসনের সাংসদ এম এ মতিন বলেন, গত এক সপ্তাহে তাঁর নির্বাচনী এলাকার ২০০ পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে এরই মধ্যে ৩০২ কোটি ৬০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে। তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে নদী খননের জন্য প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে নদীভাঙন রোধ হবে।