কাজ শেষ না করায় কর্মসংস্থান কর্মসূচির ২ কোটি টাকা ফেরত

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের প্রথম ধাপের প্রায় দুই কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ না হওয়ায় টাকা ফেরত পাঠাতে হয়েছে।

এ নিয়ে ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই কাজের শতভাগ টাকা উত্তোলনের জন্য ইউএনওর ওপর চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা চাপ সৃষ্টি করেছেন। ইউএনও বলছেন, প্রত্যেক ইউনিয়নে যত দিন কাজ হয়েছে, ঠিক তত দিনের টাকা উত্তোলনের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের জন্য প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৭৫টি প্রকল্পে গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে এ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এসব প্রকল্পের ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৮৪০ শ্রমিক দিয়ে ৪০ দিন করে কাজ করানোর কথা ছিল। কিন্তু কোনো ইউনিয়নে ২৫ দিনের বেশি কাজ হয়নি। ফলে এ প্রকল্পের মোট ১ কোটি ৯৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ২০০ টাকা ফেরত গেছে। ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে সর্বোচ্চ ২২ লাখ ৪২ হাজার টাকা ফেরত গেছে রাধাকানাই ইউনিয়ন থেকে। আর সর্বনিম্ন দেওখোলা ইউনিয়ন থেকে ফেরত গেছে ৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এসব টাকা ফেরত যাওয়ায় গ্রামবাসী উন্নয়নকাজ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। পাশাপাশি অতিদরিদ্র শ্রমিকেরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। তবে সম্প্রতি প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করতে গেলে টাকা ফেরত যাওয়ার বিষয়টি জানা যায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে একই প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু করার জন্য ফুলবাড়িয়া উপজেলায় গত ৩১ মার্চ চিঠি আসে। ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদে উপজেলা প্রশাসন থেকে এ তথ্য জানানো হলেও আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো ইউনিয়নেই দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হয়নি। ১০ জুলাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের ৪০ দিনের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কোনো ইউনিয়নেই ৪০ দিন কাজ হয়নি। এর মধ্যে প্রকল্পের সময় শেষ হয়ে যায়। যে কারণে ব্যয় না হওয়া টাকা সরকারকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। ফুলবাড়িয়া উপজেলায় প্রকল্পের প্রায় দুই কোটি টাকা ফেরত যাওয়া নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে ইউএনও আশরাফুল ছিদ্দিকের বিরোধ দেখা দিয়েছে।

ইউএনও আশরাফুল ছিদ্দিকের দাবি, এসব প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। ৪০ দিনের কম কাজ করে অথবা কোথাও কোনো কাজ না করেই শ্রমিকদের নামে টাকা তুলে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ৪০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্পে ফুলবাড়িয়ায় এমন পাঁয়তারা চলছিল। পরে বিষয়টি সঠিকভাবে তদারক করা হয়। যে ইউনিয়নে যত শ্রমিক যত দিন কাজ করেছেন, তত দিনের টাকাই উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশরাফুল ছিদ্দিক আরও বলেন, ‘এ কাজ করায় আমার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। একটি পক্ষ আমাকে বদলি করার চেষ্টা করেছে। ১৬ মার্চ আমাকে ফুলবাড়িয়া থেকে বদলির আদেশ হয়। পরে অবশ্য ৬ এপ্রিল সে আদেশ প্রত্যাহার করে আবার ফুলবাড়িয়ায় রাখা হয়।’

এ বিষয়ে জানার জন্য ফুলবাড়িয়া উপজেলার পাঁচ ইউপি চেয়ারম্যানকে ফোন করা হয়। তাঁদের দাবি, সঠিকভাবে কাজ করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে ইউএনও সঠিক বিল দিতে চাননি। আবার অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিক না পাওয়ায় যথাসময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। এসব কারণে প্রকল্পের টাকা ফেরত পাঠাতে হয়েছে।

ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে মোট ৩৫ দিন কাজ হয়েছে। কিন্তু উপজেলা থেকে আমাদের ২৪ দিনের কাজের টাকা দেওয়া হয়েছে। এতে কাজ করা শ্রমিকদের বিল দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।’