কাজ হারানো মানুষ ত্রাণও পাচ্ছে না

গত বছর লকডাউনের সময় সরকারি অনুদানসহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ ত্রাণ পেয়েছিলেন।

হতদরিদ্র লোকজন ত্রাণের অপেক্ষায় বসে আছেন। গত মঙ্গলবার ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

‘বাসাবাড়িতে কাম করতে গ্যালে বাড়ির মালিক কয় করোনা। এহন কামে আওয়া লাগবে না। ঘরে চাউল নাই। বাড়িওয়ালা ঘরভাড়া চায়। সমিতির মাইনষে (মানুষে) কিস্তি চায়। ঘরের ৫ জন মানুষ,তিন দিন ধইরা না খাইয়া থাহার মতো অবস্থা।’ গত মঙ্গলবার সকালে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কথাগুলো বলছিলেন নুরজাহান বেগম (৬০)। তিনি শহরের পশ্চিম ঝালকাঠি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।

নুরজাহান বেগম বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। করোনা ও লকডাউনের কারণে তিনি কাজ করতে পারছেন না। তাঁর পরিবারের সদস্যরা অনাহারে-অর্ধাহারে রয়েছেন। ত্রাণের আশায় তিনি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

শুধু নুরজাহান বেগম নন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে হাসি বেগম (৪৫), প্রতিবন্ধী আবদুল আজিজ (৬৪), মায়া বেগমসহ (৭৩) দুই শতাধিক খেটে খাওয়া মানুষ ভিড় করেছেন ত্রাণের আশায়। তাঁদের বেশির ভাগেরই বয়স চল্লিশের ওপর। তবে জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, এবার লকডাউনে সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ আসেনি।

প্রতিদিন সকাল হলেই ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ছাড়াও পৌরসভা কার্যালয়, সদর উপজেলা পরিষদসহ বিত্তশালীদের বাড়ির সামনে ত্রাণের আশায় ভিড় করছেন অভাবী লোকজন। ৫ এপ্রিল থেকে ঢিলেঢালা লকডাউন শুরু হয়। তবে শ্রমজীবী মানুষের তেমন বেগ পেতে হয়নি। ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হওয়ার পর খেটে খাওয়া অভাবী লোকজন বিপাকে পড়েছেন।

সদর উপজেলার কীর্তিপাশা গ্রামের প্রতিবন্ধী আবদুল আজিজ (৬৪) বলেন, তাঁর পরিবারের সদস্যসংখ্যা পাঁচ। অন্যের সাহায্য নিয়ে সংসার চালান। লকডাউনের জন্য মানুষের সাহায্য বন্ধ। তাই একটু ত্রাণের আশায় ডিসি স্যারের কাছে এসেছেন।

ডুমুরিয়া গ্রামের মায়া বেগমের (৭৩) স্বামী নেই। ভাইয়ের ছেলেদের সংসারে থাকেন। তিনি বলেন, লকডাউনে তাঁদের সংসারই চলে না। তাই তাঁকে খাবারের খোঁজে বের হতে হয়েছে।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর লকডাউনের সময় সরকারি অনুদানসহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ ত্রাণ পেয়েছেন। কিন্তু এ বছর সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সহায়তা আসেনি। ব্যক্তিপর্যায়ে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগও নেই। তবে ঝালকাঠি শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার স্বপ্নপূরণ সমাজ কল্যাণ সংস্থা পাঁচ টাকার বিনিময়ে লোকজনকে খাদ্যসহায়তা করছে।

জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়নি। তবে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আড়াই হাজার টাকা মুঠোফোনের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের কাছে চলে যাবে।