কাজ হারিয়ে গ্রামে ফেরত

পিকআপে মালপত্র নিয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন জাকির হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। গতকালের ছবি
প্রথম আলো

ঢাকার বাড্ডায় ভাড়া বাসায় থাকতেন জাকির হোসেন ও রহিমা আক্তার দম্পতি। পাঁচ সদস্যের পরিবার তাঁদের। এক ছেলে মধ্যবাড্ডার একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। জাকির রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতেন। করোনায় কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সংসার চালাতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে পরিবারটিকে ঢাকা ছাড়তে হয়েছে।

জীবিকা ও সন্তানদের শিক্ষিত করার স্বপ্ন নিয়ে ২৫ বছর আগে ঢাকায় বসতি গড়েছিলেন জাকির। সেই স্বপ্ন পেছনে ফেলে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের
দিকে গ্রামে যাচ্ছেন তিনি। তাঁদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার চরসিধলকুরা গ্রামে।

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শরীয়তপুর-ডামুড্যা-গোসাইরহাট সড়ক ধরে একটি পিকআপ ভ্যান মালপত্র নিয়ে এগিয়ে চলছিল। পিকআপের পেছনে মালামালের ওপর বসা ছিলেন দুই শিশুসহ পাঁচজন। ওই পিকআপের পেছনে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন এই প্রতিবেদক। পিকআপে বসা দুই নারী বারবার চোখের পানি মুছছিলেন। তাঁরা জাকির হোসেনের পরিবারের সদস্য। একপর্যায়ে পিকআপটি থামার পর কথা হয় তাঁদের সঙ্গে।

ডামুড্যার সিধলকুরা ইউনিয়নের চরসিধলকুরা গ্রামের মৃত আবদুর রব শরিফের ছেলে জাকির হোসেন শরিফ (৪০)। ১৯৯৬ সালে জীবিকার সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় যান তিনি। পরে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বাড্ডার ময়নারবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বাবার মৃত্যুর পর মা নাজমা বেগমকেও নিজের কাছে নিয়ে যান। বড় ছেলে মধ্য বাড্ডা এলাকার একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সাড়ে তিন বছরের আরেকটি ছেলেও রয়েছে তাঁর। রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। করোনার কারণে কাজ হারিয়েছেন। আয় কমেছে। পাঁচ সদস্যের সংসারের খরচ বহন করতে পারছিলেন না। সকালে ফেরিতে পদ্মা নদী পার হয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শরীয়তপুর শহর অতিক্রম করেন। হাতে টাকা না থাকায় মালামালের সঙ্গে পিকআপে চেপেই তাঁরা গ্রামে যাচ্ছিলেন। গ্রামে তাঁদের থাকার ঘর নেই। কোথায় থাকবেন, কীভাবে আয় করবেন, সংসারই–বা কীভাবে চলবে, এমন দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন জাকির হোসেন।

জাকির হোসেন বলেন, ‘করোনা জীবন ওলটপালট করে দিয়েছে। রাজমিস্ত্রির কাজ করে মাসে ২৫ হাজার টাকা আয় করতাম। সন্তানের পড়ালেখা ও সংসার ভালোই চলছিল। এখন তিনবেলা খাবারই জোটে না। বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে কী করব, তা–ও জানি না।’