কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় কৌশলে যাত্রী বহন

আরিচা থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রী এনে পুলিশের চোখ এড়িয়ে কাজীরহাট নৌঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের চরে নামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের। সেখান থেকে হেঁটে যাত্রীরা কাজীরহাট বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছেন
প্রথম আলো

পাবনার বেড়া উপজেলার কাজীরহাট নৌঘাট দিয়ে আরিচার দিক থেকে শত শত যাত্রী উত্তরের জেলাগুলোয় আসছেন। এসব যাত্রীর বেশির ভাগই আসছেন ফেরিতে। আর কিছু যাত্রী আসছেন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায়। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আসা যাত্রীদের কাজীরহাট ফেরিঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রাজধরদিয়া নামের চরে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে যাত্রীরা হেঁটে কাজীরহাট নৌঘাটে এসে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। আজ রোববার সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিনে কাজীরহাট নৌঘাট এলাকায় থেকে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

আজ সকাল সাতটার কিছু আগে কাজীরহাট ফেরিঘাট থেকে একটি ফেরি কয়েকটি যানবাহন নিয়ে আরিচার উদ্দেশে ছেড়ে গেলেও তাতে সাধারণ যাত্রী ছিল একেবারেই কম। এরপর সকাল ১০টা পর্যন্ত আরিচার উদ্দেশে আর কোনো ফেরি কাজীরহাট থেকে ছেড়ে যায়নি। তবে সকাল পৌনে ১০টার দিকে আরিচা থেকে কেতকী নামের একটি ফেরি কাজীরহাট ফেরিঘাটে বিভিন্ন যানবাহন ও শতাধিক যাত্রী নিয়ে ভেড়ে। ফেরিতে যানবাহনের মধ্যে যাত্রীরা ঠাসাঠাসি অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণই ছিল না। অনেকের মুখে মাস্কও দেখা যায়নি।

কাজীরহাট নৌঘাটে কর্মরত ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে এই ঘাট থেকে আরিচার মধ্যে স্পিডবোট, লঞ্চ, ফেরি ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রী পারাপার করা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে স্পিডবোট ও লঞ্চ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। আর নিয়মিতভাবে ফেরি চলাচল করার পাশাপাশি সুযোগ বুঝে বেশ কয়েকটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা কৌশলে যাত্রী পারাপার করছে।

সকাল পৌনে আটটার দিকে কাজীরহাট নৌঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রাজধরদিয়া চরে গিয়ে দেখা যায়, ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে দ্রুত যাত্রী নামানো হচ্ছে। ছবি তোলার জন্য সেখানে এগিয়ে যেতেই নৌকাটি দ্রুত চলে যায়। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা আরিচা থেকে থেকে এসেছেন। এমনিতে ইঞ্জিনচালিত নৌকার ভাড়া ৬০ টাকা করে হলেও প্রতিজন যাত্রীর কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। যাত্রীদের সরাসরি আরিচা নৌঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় না তুলে কিছুটা দূরের চর থেকে তোলা হয়। এ ব্যাপারে কথা বলার সময় বেশির ভাগ যাত্রীই কথা বলতে বিরক্তি প্রকাশ করেন।

পাবনার আতাইকুলার এক যাত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আপনাদের (সাংবাদিক) লেখালেখির জন্যই আমাগরে এত কষ্ট কইরা আসা লাগতেছে। প্রয়োজন আছে দেইখ্যাই এত রিস্ক নিয়্যা আমরা বাড়ি আসতেছি। অল্প নৌকা চলার কারণে প্রত্যেক নৌকায় গাদাগাদি কইরা যাত্রী উঠতেছে। বেশি নৌকা চললি নৌকায় ভিড় ও ভাড়া দুইই কম থাকত।’

এদিকে কাজীরহাট নৌঘাট এলাকায় থাকাকালে আরিচা থেকে আরও দু-তিনটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রী এনে নামিয়ে দিতে দেখা যায়। তবে এসব যাত্রীকে নামানো হয় কৌশলে চর এলাকার ফাঁকা জায়গায়। পুলিশ বা সাংবাদিক দেখামাত্রই নৌকাগুলোকে দিক পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় যেতে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশি ভাড়া পাওয়ার লোভে পুলিশি নজর এড়িয়ে মাছ ধরার কিছু নৌকাও যাত্রী পারাপার করছে। তবে এগুলোর মধ্য থেকে আজ সকাল থেকে ১০টা পর্যন্ত নগরবাড়ী নৌ–পুলিশ যাত্রী বহনের দায়ে ইঞ্জিনচালিত দুটি নৌকা জব্দ করে।

কাজীরহাট নৌঘাটে দায়িত্ব পালন করছিলেন নগরবাড়ী নৌ–পুলিশ ফাঁড়ির বেশ কয়েকজন সদস্য। তাঁদের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) রকিব মোহাম্মদ বলেন, ‘লঞ্চ ও স্পিডবোট তো এমনিতেই বন্ধ আছে। ইঞ্জিনচালিত নৌকা যাতে যাত্রী আনতে বা নিতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা কঠোরভাবে পাহারা দিচ্ছি। কিন্তু এর মধ্যেও সুযোগ বুঝে দু-একটি নৌকা যাত্রী নিয়ে আসছে। যাত্রী নিয়ে আসা এ ধরনের দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা আজ জব্দ করেছি।’