কাটাখালী পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে আরও দুটি মানহানির মামলা

কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে আরও দুই মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী চিফ মেট্রোপলিটন (সিএমএম) আমলি কাটাখালী থানা আদালতে দণ্ডবিধি ৫০০ ধারায় মামলা দুটি হয়েছে। আদালতের বিচারক মো. মাসুদুজ্জামান মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।

কাটাখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. সাইদুর রহমান ও কাটাখালী পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শরীয়ত উল্লাহ মামলা দুটি করেছেন।

মামলার এজাহারে আওয়ামী লীগের নেতা সাইদুর রহমান উল্লেখ করেছেন, কাটাখালী মেয়র রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামানকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দসহ ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেন। তাঁর ওই বক্তব্যের ১২ মিনিট ৩ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়। আব্বাস আলীর এমন কটূক্তি খায়রুজ্জামানের জন্য সাংঘাতিকভাবে অবমাননাকর। এমন মানহানিকর বক্তব্যের মাধ্যমে খায়রুজ্জামানের ব্যক্তিগত সুনাম, রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়াসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকা ক্ষতি সাধন হয়েছে।

যুবলীগ নেতা মো. শরীয়ত উল্লাহর করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কাটাখালী পৌরসভার মেয়রের ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তিনি কাটাখালী পৌরসভার প্রবেশমুখে ভবিষ্যতে নির্মাণ হওয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এতে তিনি বলেন, এখানে শরিয়ত মোতাবেক বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তিনি বানাতে দেবেন না। ম্যুরাল বানালে তাঁর পাপ হবে। এমন মানহানিকর বক্তব্যের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সুনাম, রাজনৈতিক আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ক্ষুণ্ন হওয়াসহ ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে।  

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিন নামঞ্জুর
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার মামলায় রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার সাময়িক বরখাস্ত মেয়র আব্বাস আলীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালে গতকাল তাঁর জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। এদিন দুপুরে শুনানি শেষে বিচারক জিয়াউর রহমান জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা বেগম জানান, সম্প্রতি আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্র জমা পড়েছে। এরপর বিচারের জন্য মামলাটি সাইবার ট্রাইব্যুনালে এসেছে। এ মামলার ধার্য তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি। তবে তার আগেই বৃহস্পতিবার আদালতে নথি উপস্থাপন করে আসামির জামিন আবেদন করা হয়েছিল। আসামি আব্বাস আলীর পক্ষে জামিন আবেদন করেছিলেন তাঁর আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহিদী। শুনানির সময় রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জামিনের বিরোধিতা করেছেন।

আরও পড়ুন

আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহিদী জানিয়েছেন, তাঁরা নথিপত্র উপস্থাপন করে আব্বাস আলীর জামিন চেয়েছিলেন। আদালত তা নামঞ্জুর করেছেন।
এর আগে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের অভিযোগে রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আব্বাস আলী বর্তমানে কারাগারে। এরপর কাটাখালী থানায় তাঁর নামে দুটি চাঁদাবাজির মামলা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তারের পর পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আজকের দুই মামলা নিয়ে বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা সংখ্যা পাঁচ।

আব্বাস আলী রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে টানা দুই মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁকে ইতিমধ্যে পৌর আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত বহিষ্কারের সুপারিশ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো তাঁকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়নি।