কাদের মির্জার অনুসারীর ওপর হামলার মামলায় আসামি চার সাংবাদিক

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানা
ফাইল ছবি

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমানের (বাদল) অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় স্থানীয় চার সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। গত বুধবার (৭ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা। তাঁরা বলেছেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাংবাদিকদের দমাতে তাঁদের মামলায় জড়ানো হয়েছে।

মামলাটির বাদী হয়েছেন সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মো. ইউসুফের বাবা আবুল হাশেম। মো. ইউসুফ বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আবদুল কাদের মির্জা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। গত ৩১ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণাকালে দল, সরকার, নির্বাচন ও দলের সাংসদদের নিয়ে বক্তব্য দিয়ে তিনি সারা দেশে আলোচনায় আসেন। ‘সত্যবচনে’ তিনি একপর্যায়ে বড় ভাই ওবায়দুল কাদের ও তাঁর স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা কাদেরকে নিয়েও নানা সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।

আবুল হাশেমের দায়ের করা মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে ফখরুল ইসলাম ওরফে রাহাতকে। আসামির তালিকায় নাম রয়েছে সেতুমন্ত্রীর আরেক ভাগনে মাহবুবুর রশিদ (মঞ্জু), উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানসহ ১৩৫ জনের নাম। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়েছে আরও ৪০-৫০ জনকে। বিস্ফোরক আইনের ৩/৩-কসহ দণ্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।

১৩৫ জন আসামির তালিকায় যে চারজন সাংবাদিকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি হাসান ইমাম ওরফে রাসেল, দৈনিক সমাচারের কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি প্রশান্ত সুভাষ চন্দ, ডেইলি নিউজ টুডের কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন ওরফে মজনু ও দৈনিক সকালের সময়ের নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি আমির হোসেন।

মামলার এজাহারে বাদী আবুল হাশেম উল্লেখ করেন, তাঁর ছেলে মো. ইউসুফ বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সমর্থক। তিনি এলাকায় কাদের মির্জার পক্ষে নানা প্রচারণা চালান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এজহারে উল্লেখিত ১-১৩৫ নম্বর আসামিরা একযোগে ৫ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বসুরহাটে পপুলার হাসপাতালের সামনের রাস্তায় অতর্কিত তাঁর ওপর হামলা চালায়। এতে তাঁর ছেলে গুরুতর আহত হয়। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়।

মামলায় চার সাংবাদিককে জড়ানোর কারণ কী, জানতে চাইলে বাদী আবুল হাশেম আজ রোববার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওই চারজন সাংবাদিক তাঁর ছেলের ওপর হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন। তাঁরা তাঁর ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেননি। তাই তিনি তাঁদের আসামি করেছেন। কিন্তু তাঁরা তো পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন, তাঁরা কেন আসামি হবে—এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চুপ থাকেন আবুল হাশেম। বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে পরে আপনার সাথে কথা বলব।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোম্পানীগঞ্জে কর্মরত একাধিক সাংবাদিক প্রথম আলোকে বলেছেন, সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় আলোচিত কোম্পানীগঞ্জে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁরা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। প্রতিনিয়ত নানাভাবে চাপে রাখা হচ্ছিল সাংবাদিকদের। ইতিমধ্যে স্থানীয় সাংবাদিকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ধারাবাহিক ঘটনার অংশ হিসেবে বিশেষ মহলের ইন্ধনে স্থানীয় চারজন সাংবাদিককে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বাদী এজাহারে যাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন, তাঁরা সবাই মামলার আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে স্থানীয় চারজন সাংবাদিকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বাদীর বক্তব্যও শুনেছেন। মামলার তদন্ত চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।