কান ধরে ওঠবস করানোর ভিডিও ফেসবুকে: শিক্ষকের মামলা

বরিশালে নার্সিং ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষককে মারধরের পর কান ধরিয়ে ওঠবস করানোর একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ওই শিক্ষক বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
শিক্ষককে হেনস্তা করার ভিডিও নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপকভাবে আলোচনা হয়। এরপর পুলিশ নিজেদের উদ্যোগে এ ঘটনায় জড়িত ইমতিয়াজ ইমন ও তাঁর স্ত্রী মনিরা আক্তারকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। কিন্তু তাঁরা গা ঢাকা দেন। একই সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা শিক্ষককে মামলা করার পরামর্শ দেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, মামলায় ইমতিয়াজ ও তাঁর স্ত্রী ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয়ের সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ নানাভাবে অভিযান চালাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই তাঁরা গ্রেপ্তার হবেন।
ভিডিওটি ৯ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে কে বা কারা এটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।অনুসন্ধান করে জানা যায়, ভিডিওটি গত ২৫ আগস্ট ধারণ করা। লাঞ্ছনার শিকার ব্যক্তি নগরের রূপাতলী এলাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজের শিক্ষক ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানটি মার্চের মাঝামাঝি থেকে বন্ধ রয়েছে। মাস দুয়েক আগে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠদান শুরু হলে ওই শিক্ষককে খণ্ডকালীন অনলাইন পাঠদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রীকে বেশি নম্বর পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভনে অনৈতিক প্রস্তাব দেব না—শিক্ষককে দিয়ে এমন কথা বলাচ্ছেন কয়েকজন। এ কথা বলতে বলতে শিক্ষক কান ধরে ওঠবস করছেন। ভিডিওতে কয়েকজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেলেও কাউকে দেখা যায়নি।
ঘটনাটির বিষয়ে ওই শিক্ষকের ভাষ্য, ২৫ আগস্ট দুপুরে তিনি নগরের চৌমাথা দিয়ে একটি কাজে যাচ্ছিলেন। সেখানে তাঁর কলেজের সাবেক ছাত্র ইমতিয়াজ ও তাঁর ৬ থেকে ৭ জন বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিলেন। তাঁরা শিক্ষকের পথরোধ করেন। কথা আছে বলে তাঁরা তাঁকে পাশের নির্জন স্থানে যেতে বলেন। কিন্তু এতে তাঁর সন্দেহ হলে তিনি যেতে চাননি। তখন তাঁরা তাঁকে জোর করে নগরের অক্সফোর্ড মিশন রোড এলাকায় নিয়ে যান। একটি দোকানে বসিয়ে তাঁরা তাঁকে নানাভাবে অপমান করেন। একপর্যায়ে চড় মারেন। লোকজন জড়ো হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় ইমতিয়াজ ও তাঁর সহযোগীরা সেখান থেকে তাঁকে গোরস্তান রোডের নির্জন স্থানে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে আবার তাঁকে মারধর করা হয়। মারধরের একপর্যায়ে ইমতিয়াজ তাঁকে কান ধরে ওঠবস করান। তাঁকে দিয়ে ‘ক্লাসে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করি, ভবিষ্যতে আর করব না’—এমন কথা বলিয়ে নেন। এ সময় একজন তা মুঠোফোনে ধারণ করেন। ইমতিয়াজ তখন তাঁর স্ত্রীকে সেখানে ডেকে আনেন। তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। এতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা তাঁকে বিবস্ত্র করতে চান। তখন বাধ্য হয়ে তিনি ইমতিয়াজের স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চান।

যোগাযোগ করলে গত সোমবার ইমতিয়াজ প্রথম আলোর কাছে ঘটনা স্বীকার করে বলেন, ওই শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এর প্রতিবাদ করায় তিনি তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। শিক্ষকের কারণে তাঁর স্ত্রী এখনো পাস করতে পারেননি। তাঁকে ধরে নিয়ে এ ধরনের কাজ করবেন না—এমন মুচলেকা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কান ধরে বলেছেন এমন কাজ আর করবেন না।
প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ না করে কেন নিজেরা ব্যবস্থা নিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ইমতিয়াজ বলেন, তিনি তো ওখানে চাকরি করেন না। তিনি দাবি করেন, ফেসবুকে এই ভিডিও তিনি প্রকাশ করেননি। তবে আজ বুধবার তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে এখনো বিপর্যস্ত। ওরা বখাটে, তাই যেকোনো সময় আমার আরও বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলতে পারে। এতে আতঙ্কও আছে। ভয় ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ায় আগে মামলা করিনি। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর পুলিশই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং এরপর মামলা করেছি।’