‘কামলা দিয়ে কেনা জায়গা’ ১০ বছর ধরে অধিগ্রহণে

দশ বছর আগে তৎকালীন পৌর কর্তৃপক্ষ কৃষক স্বরজিৎ কুমার বিশ্বাসের জমিতে পশুর হাট করার পরিকল্পনা করে জমি অধিগ্রহণ করে।

নিজের বাড়ির সামনে কৃষক স্বরজিৎ কুমার বিশ্বাস। সম্প্রতি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু পৌরসভা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

একসময় ভূমিহীন ছিলেন ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু পৌরসভার বাসিন্দা স্বরজিৎ কুমার বিশ্বাস (৬০)। পরে একখণ্ড জমি কিনে পৌর এলাকায় বাড়ি করেন। কিন্তু ১০ বছর আগে তাঁকে না জানিয়েই ওই জমি অধিগ্রহণ করে তৎকালীন পৌর কর্তৃপক্ষ। অধিগ্রহণের টাকা না নিয়ে উল্টো মামলা করেন। ১০ বছরেও এর নিষ্পত্তি না হওয়ায় নিজের টাকায় কেনা জায়গার মালিকানা পাচ্ছেন না তিনি।

স্বরজিৎ কুমারের ভাষায়, ‘অন্যের জমিতে কামলা দিয়ে’ ও কঠোর পরিশ্রম করে কিছু টাকা জমিয়ে ওই জমি কেনেন তিনি। ১৩ বছর ধরে সেই বাড়িতে বসবাস করছেন। ১০ বছর আগে তৎকালীন পৌর কর্তৃপক্ষ সেখানে পশুর হাট করার পরিকল্পনা করে জমি অধিগ্রহণ করে। তারা জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও করেছে। কিন্তু টাকা গ্রহণ না করে ভিটেবাড়ি রক্ষার চেষ্টা করছেন তিনি।

বর্তমান পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বরজিৎ কুমারের বাড়ির জায়গাটি আবাসিক এলাকায়। তাই সেখানে এখন আর পশুহাট করার পরিকল্পনা নেই। কিন্তু যেহেতু জমিটি অধিগ্রহণের কাগজপত্র তৈরি হয়েছে। মামলাও চলছে। তাই এর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হুট করে অধিগ্রহণ বাতিল করা যাচ্ছে না।

স্বরজিৎ কুমার বিশ্বাস জানান, তিনি পেশায় কৃষক। তাঁর বাবার রেখে যাওয়া কোনো ভিটেমাটি নেই। অন্যের জমিতে কামলা দিয়ে কিছু টাকা জমান। সেই টাকা দিয়ে ২০০৬ সালে হরিনাকুণ্ডু মৌজায় ৩৯ শতক জমি কেনেন। সেই জমিতে একটি টিনশেড বাড়ি তৈরি করেছেন। বর্তমানে তাঁর পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১১ । সবাই ওই বাড়িতে বসবাস করেন। বড় ছেলে অন্যের জমিতে কৃষিকাজ আর বাকি তিন ছেলে পড়াশোনা করছে।

স্বরজিৎ কুমার আরও জানান, তাঁর কেনা জমিটি ২০১০ সালে অধিগ্রহণের জন্য সরকারি নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁর জমিতে পশুহাট করা হবে। পৌরসভার পক্ষ থেকেও সেখানে পশুহাট করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তিনি ওই সময়ই অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেন। একপর্যায়ে তাঁকে টাকা নিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি টাকা গ্রহণ করেননি। জমি রক্ষার আর কোনো উপায় না পেয়ে আদালতে মামলা করেন। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আইনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, কিন্তু জমি ফেরত পাচ্ছেন না। নতুন করে বাড়ি সংস্কারও করতে পারছেন না তিনি।

হরিনাকুণ্ডু পৌরসভার বর্তমান মেয়র শাহিনুর রহমানও স্বরজিৎ কুমারের জমির বিষয়ে একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন। আর ইউএনও সৈয়দা নাফিস সুলতানা বলেন, কেউ সমাধানের জন্য এলে তিনি পদক্ষেপ নেবেন।