কারচুপি করতেই ইভিএমে ভোট গ্রহণের আয়োজন: বিএনপি প্রার্থী সহিদুল

বরিশালের উজিরপুর পৌরসভার নির্বাচন আগামী ২৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উজিরপুর পৌর বিএনপির সভাপতি মো. সহিদুল ইসলাম খান। প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আসন্ন নির্বাচন ও পৌরসভার সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম
মো. সহিদুল ইসলাম খান
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

২০১৫ সালে আপনি বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলেন। তখন কারচুপির অভিযোগ এনে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এবার কী ভেবে প্রার্থী হলেন?

সহিদুল ইসলাম: দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচন রাতেই হয়ে যায়। যে কারণে ভোটার ও মানুষ ভোটকেন্দ্রে যান না। দল ও আমি নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরও নির্বাচনে যাওয়ার একটি কারণ হচ্ছে দলকে সুসংগঠিত করা এবং কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখা। পাশাপাশি ভোট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশবাসী ও এলাকার ভোটারদের আওয়ামী গণতন্ত্রের রূপ দেখানো। তারা ভোট ডাকাতির চিত্র অতীতে দেখতে পেয়েছে এবং সামনেও পাবে। এ কারণেই অংশ নেওয়া।

প্রশ্ন :

এবার প্রথমবারের মতো উজিরপুর পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হবে। সুষ্ঠু ভোট আয়োজন নিয়ে কি কোনো শঙ্কা আছে?

সহিদুল ইসলাম: ইভিএম বিষয়ে ভোটারদের তেমন ধারণা নেই। এ বিষয়ে ভোটার অসচেতন। ক্ষমতাসীন দল ভোটে কারচুপি করতেই ভোটারদের অসচেতন রেখে ইভিএমে ভোট গ্রহণের আয়োজন করেছে। তবে সুষ্ঠ ভোট হলে ভোটাররা আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।

প্রশ্ন :

ইভিএম সম্পর্কে ভোটারদের ধারণা দিতে আপনার কোনো কর্মসূচি আছে?

সহিদুল ইসলাম: নির্বাচন অফিস থেকে ইভিএম সম্পর্কে যে সিডি দেওয়া হয়েছে, তা প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভোটারদের সচেতন করা হচ্ছে। তবে দেশে ইভিএমে অতীতের ভোট গ্রহণ থেকে কারচুপি নিয়ে আমিসহ ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।

প্রশ্ন :

২০১৫ সালে আপনি ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। এবার আপনি জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী? কাকে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন?

সহিদুল ইসলাম: ২০১৫ সালের নির্বাচনে সরকার দলীয় বাহিনী সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। এবার সুষ্ঠু ভোট হলে ভোটার নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলে আমি বিজয়ী হব। আমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন ব্যাপারী।

প্রশ্ন :

বরিশালের প্রত্যন্ত পল্লি এলাকা নিয়ে উজিরপুর তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা গঠিত হয়েছে। তেমন কোনো নাগরিক সুবিধা নেই। নির্বাচিত হলে আপনার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি?

সহিদুল ইসলাম: উজিরপুর ও গুঠিয়া ইউনিয়নের কিছু এলাকা নিয়ে উজিরপুর পৌরসভা করা হয়। এলাকাটি অনুন্নত, তাই পৌরবাসীকে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে আমার একটি মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে। তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

প্রশ্ন :

ভোটারদের আকৃষ্ট করতে আপনার কোনো প্রতিশ্রুতি আছে কি না?

সহিদুল ইসলাম: উজিরপুর পৌরসভা অবহেলিত জনপথ। এখানে রয়েছে মাদক সমস্যা; নেই ডাস্টবিন, ময়লা ফেলার ভাগাড়। এ ছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন সড়কে হাঁটুপানি জমে থাকে এবং সড়কের পাশে কোনো নালা নেই। আমি নির্বাচিত হলে মাদকমুক্ত পৌরসভা গড়ব। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ নির্মাণের ব্যবস্থা করব, কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ মানবিক মূল্যবোধের উন্নয়ন ঘটাব। বিশেষ করে পৌর নাগরিকদের মতামতের অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন কাজ করব।

প্রশ্ন :

আপনার দল তো সরকারে নেই। আপনি কী করে পৌরসভার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন?

সহিদুল ইসলাম: সচেতন ও সোচ্চার জনগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধতাই উন্নয়নের পূর্বশর্ত বলে আমি করি। পৌরসভার যে জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের দলমতনির্বিশেষে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ করে পরিকল্পিত কর্মসূচি নিয়ে উন্নয়ন করা হবে। অর্থ সেখানে কোনো সমস্যা নয়। দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজি রোধ করে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

প্রশ্ন :

বর্তমান পৌরসভায় উন্নয়ন প্রকল্পের মান নিয়ে আপনার কোনো বক্তব্য আছে কি না?

সহিদুল ইসলাম: উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে পৌর তহবিল লোপাট হচ্ছে। কাজের কোনো মান নেই। এইচবিবি কাজের ইট খাড়া করে না দিয়ে সলিং করা হচ্ছে। কার্পেটিংয়ের কাজ নামমাত্র করা হচ্ছে। আমি নির্বাচিত হলে টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করব, যার সুফল দীর্ঘস্থায়ীভাবে নাগরিকেরা ভোগ করবে।

প্রথম আলো: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সহিদুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।