কারাবন্দী তরুণকে দায়ী করে কিশোরীর আত্মহত্যা

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় এক কিশোরী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আজ সোমবার সকালে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই কিশোরী ডামুড্যার কনেশ্বর ইউনিয়নের বাসিন্দা।

পুলিশ মৃত কিশোরীর কাছ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে, যাতে লেখা, জাকির হোসেন নামের এক তরুণ (২৫) তার মৃত্যুর জন্য দায়ী। সে (কিশোরী) জাকিরের শাস্তি দাবি করে। জাকির ওই কিশোরীকে অপহরণ করার অভিযোগে করা মামলায় বর্তমানে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে রয়েছেন।

ডামুড্যা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করতেন ডামুড্যার সুতলকাঠি গ্রামের জাকির হোসেন ছৈয়াল। গত ৯ নভেম্বর তিনি ওই কিশোরীকে এলাকা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবা গত শুক্রবার ডামুড্যা থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ ওই দিনই ঢাকা থেকে তাকে উদ্ধার ও জাকিরকে গ্রেপ্তার করে। তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে জাকিরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

ওই ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। মন ভালো রাখার জন্য তাকে উপজেলার কুলকুরি এলাকায় তার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হয়। আজ সকালে তিনি ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা করার আগে তিনি একটি চিরকুট লেখে। সেখানে উল্লেখ করে, ‘জাকির ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী। জাকির আমাকে এ পৃথিবীতে বাঁচতে দিল না। আমাকে মরে যেতে বাধ্য করল। আমি চাই জাকিরের কঠিন শাস্তি হোক।’

ওই কিশোরীর এক আত্মীয় বলেন, ‘ওই কিশোরী আমার বেয়াইয়ের মেয়ে। আমার বাড়িতে বেড়াতে আসে। এভাবে মেয়েটি আত্মহননের পথ বেছে নেবে, ভাবতে পারিনি।’

ওই কিশোরীর বাবা বলেন, ‘জাকিরের স্ত্রী–সন্তান আছে। তারপরও সে আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। আমার মেয়েকে অপহরণ করে বিয়ে করতে চেয়েছিল। সে আমার মেয়ের জীবনটা বিষিয়ে তুলছিল। অপহরণের ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল আমার মেয়ে। তাই তাকে বেড়াতে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে আত্মহত্যা করবে, তা বুঝতে পারিনি। আমরা জাকিরের কঠোর বিচার দাবি করছি।’

ঘটনার পর থেকে জাকিরের পরিবার সুতলকাঠি গ্রামে থেকে আত্মগোপনে চলে গেছে। আর জাকির কারাগারে থাকায় তাঁর কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই কিশোরীকে গত মাসে অপহরণ করা হয়েছিল। পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পরই তাকে উদ্ধার করে। মেয়েটি আত্মহত্যা করার আগে একটি চিরকুট লিখে রেখেছে। যে যুবক তাকে অপহরণ করেছিল, তাঁকেই মুত্যুর জন্য দায়ী করেছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। আর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণও জানা যাবে। পরিবার এখনো মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কোনো অভিযোগ করেনি।’