কারামুক্তির আনন্দে কাঁদলেন জাহিদ

জাহিদের বর্তমান বয়স ৪৮ বছর। ১৯৯৪ সালে যখন তাঁর বিয়ে হয়, তখন তিনি ২২ বছরের তরুণ। ২০০০ সালে যখন তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং ফাঁসির আদেশ পান, তখন তাঁর বয়স ২৮ বছর। এরপর ২০টি বছর কারাবন্দী থাকতে হয় তাঁকে। অবশেষে নির্দোষ প্রমাণিত হলেন যখন, তখন যৌবন অতীত হয়েছে তাঁর।

দীর্ঘ ২০ বছর পরে কনডেম সেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন ফাঁসির আসামি শেখ জাহিদ। আজ সোমবার সন্ধ্যায় খুলনা জেলা কারাগার ফটকে।প্রথম আলো

স্ত্রী-সন্তান হত্যা মামলায় ২০০০ সালের ২৫ জুন আদালত ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন শেখ জাহিদকে। উচ্চ আদালত থেকেও ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে আপিল করে ওই রায় থেকে খালাস পেয়েছেন জাহিদ। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।

জাহিদের বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলায়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে বিশেষ বাহকের মাধ্যমে বাগেরহাট থেকে জাহিদের খালাস হওয়ার কাগজপত্র খুলনা জেলা কারাগারে আসে। কিন্তু সাপ্তাহিক ও মহররমের ছুটির কারণে ছাড়া পাননি তিনি।

কখনো ভাবিনি ছাড়া পাব। আমি নির্দোষ ছিলাম। কারাগারে ২০ বছর অনেক কষ্টে কেটেছে। আমার এখন কেউ নেই, কিছু নেই। এমন পরিস্থিতিতে সরকার যদি কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়, তাহলে তা নিয়েই বেঁচে থাকব।
শেখ জাহিদ, কারামুক্তির পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া

সন্ধ্যার দিকে একমুখ হাসি নিয়ে কারাগার থেকে বের হন জাহিদ। পরে কারা ফটকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আবেগে কেঁদে ফেলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘কখনো ভাবিনি ছাড়া পাব। আমি নির্দোষ ছিলাম। কারাগারে ২০ বছর অনেক কষ্টে কেটেছে। আমার এখন কেউ নেই, কিছু নেই। এমন পরিস্থিতিতে সরকার যদি কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়, তাহলে তা নিয়েই বেঁচে থাকব।’

জাহিদের বর্তমান বয়স ৪৮ বছর। ১৯৯৪ সালে যখন তাঁর বিয়ে হয়, তখন তিনি ২২ বছরের তরুণ। ২০০০ সালে যখন তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং ফাঁসির আদেশ পান, তখন তাঁর বয়স ২৮ বছর। এরপর ২০টি বছর কারাবন্দী থাকতে হয় তাঁকে। অবশেষে নির্দোষ প্রমাণিত হলেন যখন, তখন যৌবন অতীত হয়েছে তাঁর। বাকি জীবনটা তাঁর কাছে তাই নতুন জীবনের মতোই। তাঁর স্ত্রীর আগে একটি বিয়ে হয়েছিল। ওই স্বামীই তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করতে পারেন বলে ধারণা করছেন জাহিদ। তাঁর শ্বশুর তাঁকে মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এত দিন মামলাটি ওই বিভাগেই পড়ে ছিল। চলতি মাসে মামলাটি নজরে পড়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চের। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন সর্বোচ্চ আদালত। নিযুক্ত করা হয় জাহিদের আইনজীবী। কিন্তু মামলার শুনানি করতে গিয়ে আপিল বিভাগ দেখেন নানা অসংগতি।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের দিকে বাগেরহাটের ফকিরহাট এলাকার রহিমা নামের এক নারীর সঙ্গে বিয়ে হয় জাহিদের। ১৯৯৭ সালের ১৬ জানুয়ারি ফকিরহাট থানায় তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন তাঁর শ্বশুর ময়েনউদ্দিন শেখ। মামলায় রহিমা খাতুন (২৮) ও তাঁর দেড় বছরের মেয়ে রেশমা খাতুনকে ঘুমের মধ্যে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ করা হয়।

মামলায় অভিযোগে বলা হয়, জাহিদ তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার পর পালিয়ে গেছেন। পারিবারিক কলহের জেরে তাঁদের হত্যা করেন জাহিদ। ওই মামলায় বাগেরহাটের আদালত ২০০০ সালের ২৫ জুন এক রায়ে একমাত্র আসামি জাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার আগে জাহিদ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। নিম্ন আদালতের রায় অনুমোদনের জন্য উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। ২০০৪ সালের ৩১ জুলাই সেখানেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে কারাগার থেকে ২০০৭ সালে আপিল বিভাগে জেল আপিল করেন জাহিদ।

এত দিন মামলাটি ওই বিভাগেই পড়ে ছিল। চলতি মাসে মামলাটি নজরে পড়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চের। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন সর্বোচ্চ আদালত। নিযুক্ত করা হয় জাহিদের আইনজীবী। কিন্তু মামলার শুনানি করতে গিয়ে আপিল বিভাগ দেখেন নানা অসংগতি। বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরলে দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ২৫ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ জাহিদকে খালাস দেন।

খুলনার জেল সুপার ওমর ফারুক বলেন, জাহিদ কনডেম সেলে থাকার পর তাঁর পরিবার থেকে মামলাটি পরিচালনা করা হতো না বলে তাঁকে জানানো হয়। এরপর জাহিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডেপুটি জেলার ফখরুদ্দিনকে বিষয়টি দেখভালের জন্য বলা হয়। এ সময় ঢাকার লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা সহযোগিতা করেন। অবশেষে আপিলে তাঁর খালাস হয়েছে।