কাল থেকে খুলছে জুড়ীর সোনারুপা চা-বাগান

মৌলভীবাজার জেলার মানচিত্র

মৌলভীবাজারের জুড়ীর সোনারুপা চা-বাগান আগামীকাল মঙ্গলবার আবার খুলছে। বাগানের ব্যবস্থাপকসহ প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন লোককে মারধরের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগানের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। এ পরিস্থিতির নিরসনে স্থানীয় সাংসদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের নির্দেশনায় আজ সোমবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এক বৈঠকে বাগানটি খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে বৈঠক শুরু হয়। এতে ইউএনও আল ইমরান রুহুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়া অন্যান্যের মধ্যে কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাওছার দস্তগীর, জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস, স্থানীয় পূর্ব জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন, বাগান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক কাজল মাহমুদ, জুড়ী ভ্যালি চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কমল বুনারজিসহ বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় সাংসদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের নির্দেশনায় আজ সোমবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এক বৈঠকে বাগানটি খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।

ইউএনও আল ইমরান রুহুল ইসলাম বিকেল সোয়া চারটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবস্থাপকসহ অন্যদের মারধরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ ঘটনায় যেসব শ্রমিক জড়িত রয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রম আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। এ ছাড়া উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি আপসে মিটমাটের জন্যও একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে শ্রমিকনেতাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।

বাগান কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, জুড়ী উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত সোনারুপা চা-বাগানটি দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ পরিচালনা করছে। সোনারুপা ছাড়াও আশপাশে ধামাই ও আতিয়াবাগ নামের আরও দুটি বাগান রয়েছে। সোনারুপায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক নারী-পুরুষ রয়েছেন। শ্রমিকদের বসতঘর সংস্কারের জন্য বাগানের কিছু শ্রমিক আগে কাঠ সরবরাহ করতেন। ওই বাবদ ব্যবস্থাপকের কাছে তাঁদের বেশ কিছু টাকা বকেয়া ছিল। সম্প্রতি নতুন করে বসতঘর সংস্কারের জন্য কাঠের প্রয়োজন পড়লে ব্যবস্থাপক আগের কাঠ সরবরাহকারী শ্রমিকদের ডেকে কথা বলেন। কিন্তু তাঁরা দর বেশি চাওয়ায় অন্য লোকদের কাছ থেকে কাঠ কেনা হয়।

আরও পড়ুন

১৩ এপ্রিল গাড়িতে করে কাঠ বাগানে নিয়ে আসা হচ্ছিল। এ সময় আগের কাঠ সরবরাহকারী শ্রমিকেরা বকেয়া টাকা পরিশোধের দাবিতে পথে গাড়ি আটকান। পরে এ ব্যাপারে আশ্বাস পেয়ে গাড়িটি ছেড়ে দেন। এরপর ব্যবস্থাপক পুলিশ নিয়ে কাঠ সরবরাহকারী শ্রমিকদের বাড়িতে গেলে বাগানে উত্তেজনা দেখা দেয়। শ্রমিকেরা ব্যবস্থাপকের অপসারণ দাবি করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়।

১৬ এপ্রিল বাগানের ব্যবস্থাপক মালেক নেওয়াজসহ ঢাকা থেকে আসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকে বাগানে পেয়ে আগের কাঠ সরবরাহকারী শ্রমিকেরা তাঁদের মারধর করেন। পরে আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ব্যবস্থাপক বাদী হয়ে কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ১৭ এপ্রিল সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগান বন্ধ ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে ওই দিন শ্রমিকেরা বাগানের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা দ্রুত বাগান খুলে দেওয়ার দাবি জানান।