কালকিনিতে নির্বাচন স্থগিত মেনে নিয়েছেন আ.লীগ প্রার্থী, অন্যরা ক্ষুব্ধ

পৌরসভা নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভা নির্বাচন স্থগিত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মসিউর রহমান ওরফে সবুজ ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এস এম হানিফ নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে স্থগিত হওয়া কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনের খবর ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা। তাঁরা বলছেন, এত নাটকীয়তার পর শেষ মুহূর্তেই নির্বাচন স্থগিত করার কিছুই ছিল না। পুলিশ প্রশাসনের দুর্বল ভূমিকাকে দুষছেন সাধারণ ভোটাররা।

তবে জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অনিবার্যকারণবশত নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে নির্বাচন স্থগিত রাখার বিষয়ে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। আগামী রোববার হয়তো স্থগিত হওয়ার কারণ জানা যাবে।’

এদিকে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মসিউর রহমান তাঁর বাসভবনে নির্বাচন স্থগিত করার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। কারণ নাকি নির্বাচনের পরিবেশ নেই। প্রার্থী হিসেবে চাপে রাখা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হয়নি এখনো। রিটার্নিং অফিসারকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেন নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে? তিনি বলেন যে তাঁরা জানেন না।’

স্থানীয় সাংসদ আবদুস সোবহান গোলাপের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মসিউর রহমান বলেন, ‘নৌকা জিততে পারবে না, এমপির প্রার্থী জিততে পারবে না—এইটাই নির্বাচন বন্ধ রাখার মূল কারণ। অন্য কোনো কারণ নেই। আমি বাঁচি বা মরি, এই নির্বাচন যেদিন হয়, সেদিন আমিও খবর পেয়ে প্রার্থী হব। আমি যদি প্রার্থী না হই, তাহলে এই অঞ্চলের মানুষ আমরা সম্মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে একজন প্রার্থী দেব। প্রার্থী যে–ই হোক। কিন্তু এমপির প্রার্থীকে জিততে দেব না।’
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এস এম হানিফ। তিনি গতকাল রাত ১১টার দিকে ভূরঘাটা এলাকায় তাঁর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেছেন যে এমপির প্রার্থী, নৌকা প্রার্থী হেরে যাবে; সেই ভয়ে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। উনি এসব আবোলতাবোল ও উদ্ভট কথা কোথা থেকে পেলেন, আমি জানি না।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমানকে পুলিশ তুলে নেওয়ার ঘটনাকে এস এম হানিফ নাটকের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘কিছুদিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী একটা নাটক করেছেন। এগুলো সাধারণ জনগণ জানেন। তাঁরা নির্বাচন করলে জামানত থাকত কি না, সেই সন্দেহ ছিল। নির্বাচনে হারার ভয়ে এখন আবোলতাবোল বলছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।’

এদিকে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর বি‌ক্ষোভ মি‌ছিল ও সমা‌বেশ ক‌রে‌ছেন কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী। পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়া‌র্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আসাদুজ্জামান তালুকদার ওরফে লাভু বলেন, ‘সরকারি দলের সিনিয়র নেতারা নিজ দলের প্রার্থীকে বাড়তি সুবিধা দিতে এই নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছেন। এর ফলে আমাদের নির্বাচনের ব্যয় বেড়ে যাবে। এর দায় কে নেবে? কোনো কারণ ছাড়াই নির্বাচন স্থগিত করার ঘটনার আমরা প্রতিবাদ জানাই।’

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী সোহেল রানা তাঁর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘নির্বাচনের মাত্র দুই দিন বাকি ছিল। নির্বাচন পরিচালনার সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার কথা বলে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আমি তাদের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

জেলা নির্বাচন অফিসের সূত্র জানায়, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য কালকিনি পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কালকিনি পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ৩৩ হাজার ৪০০। নারী ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৭০০ ও পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৩০০ জন। চতুর্থ ধাপে কালকিনি পৌরসভার এই নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে হওয়ার প্রস্তুতি ছিল।

৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন কালকিনির স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মশিউর রহমান সবুজ। বিকেল ৪টার দিকে সবুজের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দেন মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান। তাৎক্ষণিক সেখানে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন গাড়ি নিয়ে হাজির হন। সেখান থেকে সবুজকে পুলিশের গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরপরই নিখোঁজ হন সবুজ। এরই প্রতিবাদে কালকিনি থানা ঘেরাও করেন সবুজের সমর্থকেরা। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে বিক্ষোভ মিছিলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা চালান আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম হানিফের সমর্থকেরা। পরে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আহত হন অর্ধশত মানুষ।

নিখোঁজের ১১ ঘণ্টা পর বাড়িতে ফিরে আসেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মশিউর রহমান ওরফে সবুজ। এরপর আলোচনায় আসে কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনের বিষয়টি।