পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার যুবক কারাগারে

প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কাশবনে ঘুরতে গিয়ে স্থানীয় তরুণীর শ্লীলতাহানির শিকার হওয়ার ঘটনায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর নাম জুনায়েদ হোসেন (২৪)। রোববার দিবাগত মধ্যরাতে জেলা শহরের দক্ষিণ পৈরতলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

জুনায়েদ জেলা শহরের দক্ষিণ পৈরতলা এলাকার বাসিন্দা। তবে শ্লীলতাহানির ঘটনায় পুলিশের করা মামলার মূল অভিযুক্ত রাহিম মিয়াকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। রাহিমের বাড়ি জেলা শহরের ছয়বাড়িয়া এলাকায়। রাহিমের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সূত্রে জানা যায়, তিনি ‘লক্ষ্য মোদের মানবসেবা’ ফেসবুক পেজের এ সময় অ্যাডমিন ছিলেন।

তবে লক্ষ্য মোদের মানবসেবা ফেসবুক পেজের বর্তমান অ্যাডমিন নুসরাত পিউ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ছেলে আমাদের ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন না। ওই ছেলে হয়তো কোনোভাবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আর আমরা ওই ছেলেকে চিনি না।’

পুলিশ ঘটনা জানার পরপরই শ্লীলতাহানিকারী, ভিডিও ধারণকারী এবং ফেসবুকে ভিডিও ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত পাঁচ যুবককে শনাক্ত করে। তাঁরা পাঁচজনই পরস্পরের বন্ধু। শ্লীলতাহানির ঘটনায় সরাসরি জড়িত কোনো এক বন্ধুর সঙ্গে চলতি মাসে বিরোধের জের ধরে রুবেল (২৪) নামের একজন ভিডিওটি ভিডিওটি প্রথম ফেসবুকে পোস্ট করেন।

শ্লীলতাহানির শিকার তরুণী (১৮) এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলে জানা গেছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরের পুনিয়াউটের কাশবনে গত ডিসেম্বর-জানুয়ারির শীতের কোনো এক সন্ধ্যার ঘটনা এটি। ঘটনাটি সবার সামনে আসে ২৩ সেপ্টেম্বর। ওই দিন দুপুরে ওই ঘটনার ১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকভিত্তিক সামাজিক সংগঠন ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ওই তরুণীর চেহারা ঝাপসা করে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। এরপর কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী বিষয়টি সদর থানা-পুলিশের নজরে আনেন। পরে পুলিশ ঘটনার হোতাদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছে। গ্রেপ্তার জুনায়েদ ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন রাহিম (২৪), শাকিল (২৩), মাইনুদ্দিন (২৩) ও রুবেল (২৪)। তাঁরা সবাই পরস্পরের বন্ধু।

ভিডিওতে দেখা যায়, পুনিয়াউট এলাকার কাশবনে ঘুরতে যাওয়া কালো বোরকা পরা তরুণীকে উত্ত্যক্ত করছেন তিনজন যুবক। তাঁরা তরুণীর হাত থেকে ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে যান। পরে ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে যান তাঁদের মধ্যে একজন (রাহিম)। ওই তরুণী ওই যুবকের পায়ে ধরে ‘বড় ভাই’ সম্বোধন করে চলে যেতে আকুতি করেন। কিন্তু ওই যুবক তরুণীর শরীরে হাত দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে রাখেন এবং একপর্যায়ে মাথা থেকে কাপড় সরিয়ে ফেলেন। বারবার বাধা দিলেও তিনি শোনেননি। এ সময় ভিডিওতে আরেক যুবককে (জুনায়েদ) দেখা যায় এবং ভিডিও ধারণকারী যুবককে (শাকিল) তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়।

পুলিশ ঘটনা জানার পরপরই শ্লীলতাহানিকারী, ভিডিও ধারণকারী এবং ফেসবুকে ভিডিও ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত পাঁচ যুবককে শনাক্ত করে। তাঁরা পাঁচজনই পরস্পরের বন্ধু। ঘটনার মূল হোতা যিনি তরুণীর গায়ে হাত দেন এবং শ্লীলতাহানি করেন, ওই যুবকের নাম রাহিম (২৪)। গ্রেপ্তার জুনায়েদ এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাটি মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন শাকিল (২৩) নামে তাঁদের আরেক বন্ধু। এই ভিডিও পরে তাঁদের সব বন্ধুর মুঠোফোনে আদান-প্রদান হয়। মাইনুদ্দিন (২৩) নামে তাঁদের এক বন্ধুর মুঠোফোন থেকে রুবেল (২৪) নামের এক বন্ধু ভিডিওটি নিয়ে প্রথম ফেসবুকে পোস্ট করেন। শ্লীলতাহানির ঘটনায় সরাসরি জড়িত কোনো এক বন্ধুর সঙ্গে চলতি মাসে বিরোধের জের ধরে তিনি ভিডিওটি প্রকাশ করেন। সেখান থেকে এক ব্যক্তি এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থার আশায় ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ পেজের ইনবক্সে ভিডিওটি দেন এবং সেখান থেকে ভিডিওটি পুলিশের নজরে আসে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার পরিদর্শক (অভিযান) ইশতিয়াক আহমদ বলেন, ‘গ্রেপ্তার জুনায়েদ তরুণীকে যৌন নিপীড়নে মূল অভিযুক্ত রাহিমের বন্ধু। যৌন নিপীড়নের সময় জুনায়েদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পেরেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুনায়েদ নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত সবার নাম বলেছেন। বাকিরা পলাতক রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।’