কিবরিয়া হত্যার বিচার শেষ হয়নি ১৬ বছরেও

শাহ এ এম এস কিবরিয়া
ছবি: সংগৃহীত

অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ১৬ বছর পূর্ণ হলো আজ ২৭ জানুয়ারি। এই দীর্ঘ সময়েও হত্যা মামলাটির বিচারকাজ শেষ হয়নি। বর্তমানে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি এ হত্যাকাণ্ডের আসল মদদদাতা কে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গ্রেনেডের উৎস কী, এ দুটি প্রশ্নের উত্তর বের করতে। কিন্তু এ বিষয়ে তদন্তকারীদের আগ্রহ ছিল কম, ছিল রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তিনটিতেই ছিল ভুল। এর একটির সঙ্গে আগেরটির কোনো সম্পর্ক নেই। সেই সময় হবিগঞ্জের একজন সাংসদ ও আওয়ামী লীগ নেতা আমাকে ও আমার পরিবারকে অভিযোগপত্র মেনে নিতে বলেন।’

শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মৃত্যু দিবস উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে আজ বুধবার ঢাকার বনানীতে তাঁর কবরে বেলা ১১টায় পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। একই সঙ্গে শাহ কিবরিয়ার জন্মস্থান হবিগঞ্জে কিবরিয়া স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে হত্যাকাণ্ডের স্থান বৈদ্যের বাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে ঈদ–পরবর্তী আওয়ামী লীগের এক জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। ওই হামলায় তাঁর ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী নিহত হন। আহত হন ৭০ জন। ঘটনার পরদিন হত্যা মামলা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। পরে মামলা দুটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাইউমসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এ অভিযোগপত্রের বিষয়ে আদালতে নারাজি আবেদন করে বাদীপক্ষ। পরে মামলার পুনঃ তদন্তের পর ২০১১ সালের ২০ জুন আসামির সংখ্যা ১৬ জন বাড়িয়ে ২৬ জনের নামে দ্বিতীয় দফা অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এ নিয়েও আপত্তি জানায় নিহত কিবরিয়ার পরিবার।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে নতুন করে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। তাঁদের নামে বোমা হামলা ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়।

মামলাটি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। মামলার সরকারি কৌঁসুলি ও সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল সরকারি কৌঁসুলি সরোয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল প্রথম আলোকে বলেন, এই হত্যা মামলায় ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী, বিশেষ করে যাঁরা ঘটনার সময় আহত হন, তাঁদের অনেকেই এখনো সাক্ষ্য দেননি। যে কারণে বিচার বিলম্ব হচ্ছে। আজ মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।