কিরগিজস্তানে পাচারের শিকার ১৩ যুবকের মানবেতর জীবন

কিরগিজস্তানে পাচারের শিকার বাংলাদেশি ১৩ যুবককে ফিরিয়ে আনতে সংবাদ সম্মেলন করে রাইটস যশোর। আজ রোববার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

পাচারের শিকার হয়ে কিরগিজস্তানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বাংলাদেশি ১৩ যুবক। বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে সরকারের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন তাঁরা। বর্তমানে একটি পাচারকারী চক্রের হাতে বন্দী সাতজন, আর সে দেশের একটি মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে শেল্টার হোমে (আশ্রয়ে) রয়েছেন অপর ছয়জন। পাচারকারী চক্রের হাতে বন্দী সাতজনকে চাবুক দিয়ে পেটানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

পাচারের শিকার ব্যক্তিদের বিষয়ে কিরগিজস্তানের মানবাধিকার সংগঠন ওয়েসিস সম্প্রতি তথ্য বিনিময় করে যশোরের মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের সঙ্গে। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে আজ রোববার জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশি এ সংগঠন। এতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কিরগিজস্তানে পাচারের শিকার হওয়া ১৩ যুবককে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক। তিনি বলেন, সাত মাস আগে মাহমুদুল হাসান মীর নামের একজন দালাল চুয়াডাঙ্গা, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা থেকে ১৪ জনকে তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ দেওয়ার কথা বলে কিরগিজস্তানে নিয়ে যান। এ জন্য দালাল চক্র প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা করে নেয়। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিরগিজস্তানে যাওয়ার পর বেতন হবে মাসিক ৬০০ মার্কিন ডলার এবং কাজের সময় হবে আট ঘণ্টা। কিন্তু ওই ১৪ জনকে কিরগিজস্তানে পাঠানোর পর তাঁরা সঠিক কাজ ও মজুরি পাননি।

সম্মেলনে মুঠোফোনে যুক্ত করা হয় কিরগিজস্তানে শেল্টার হোমে থাকা আসাদুজ্জামান নামের একজনকে। নিজেদের মানবেতর অবস্থার কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের আনা হয়েছে, সে অনুযায়ী কাজ বা বেতন কিছুই দেওয়া হয়নি। ছোট একটি কাপড়ের কারখানায় কাজ দেওয়া হলেও বেতন দেওয়া হচ্ছে না। কোনো রকমে খেতে দেওয়া হচ্ছে। বেতনের টাকা চাইলে বা কাজ করতে রাজি না হলে চাবুক দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। ওই কারখানা থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানব পাচার চক্রের দালাল মাহমুদুল হাসান মীর তাঁদের এই কারখানার মালিকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ জন্য বেতন চাইলে বা কাজ করতে রাজি না হলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে পাঁচজন ওই বন্দিদশা থেকে পালিয়ে কিরগিজস্তানের ওয়াসিস নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের আশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন।

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, পাচারের শিকার একজন কিছুদিন আগে পালিয়ে বাংলাদেশে ফিরে গেছেন। এ ছাড়া সাতজন পাচারকারী চক্রের হাতে এখনো বন্দী। এ অবস্থায় বন্দী ও ওয়াসিসের আশ্রয়ে থাকা ১৩ বাংলাদেশি যুবককে দ্রুত উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ থেকে পাচারের শিকার এক যুবকের মা বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জের আদালতে মানব পাচারের একটি মামলা করেছেন। গত ১১ এপ্রিল করা ওই মামলায় কিরগিজস্তানে পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকার গ্রিন রোড এলাকার মাহমুদুল হাসান ও তাঁর ভাই সৈয়দ শাহীন মীরকে আসামি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্ট মেসার্স মক্কা মদিনা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও মেসার্স আল লাবিন ইস্টাবলিশমেন্ট লিমিটেড থেকে পাচারের শিকার ১৩ যুবককে কিরগিজস্তানে পাঠানোর তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক। তিনি বলেন, এ চক্রের সঙ্গে আরও কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম থাকতে পারে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এটা তদন্ত করে দেখার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক আরও বলেন, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পুলিশের আইজিপি ও তাসখন্দে নিযুক্ত বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডরের দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রাইটস যশোরের আইন পরামর্শক তাহমিদ আকাশ ও খুলনার প্রগতি সমাজকল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবু মহসিন উপস্থিত ছিলেন।