কিশোরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে স্থগিত কেন্দ্রে আটকে ভাগ্য

  • আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় একটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।

দুই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট
ফাইল ছবি

কিশোরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে ফলাফল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর কেউই শেষ বিজয়ের হাসি হাসতে পারেননি। উভয়ের মধ্যে ভোটের ব্যবধান মাত্র ৪৮৪। ফলাফল স্থগিত হয়ে যাওয়া কেন্দ্রে ভোটসংখ্যা ১ হাজার ৮৫২। ফলে এ কেন্দ্রের ফলাফলের ওপর ঝুলে আছে দুই প্রার্থীর ভাগ্য।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. পারভেজ মিয়া পেয়েছেন ২০ হাজার ৯২২ ভোট। আর বিএনপির প্রার্থী মো. ইসরাইল মিঞা পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৮ ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ৪৮৪ ভোটে এগিয়ে আছেন।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, একটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত থাকায় পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করা যায়নি। ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগে শহরের ওয়ালীনেওয়াজ খান কলেজের (পূর্ব তিনতলা ভবন) কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়। ওই কেন্দ্রে ১ হাজার ৮৫২ ভোট আছে। এ কেন্দ্রে আবার ভোট নেওয়ার পর কিশোরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত হবে।

শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকেরা দাবি করছেন, তাঁদের প্রার্থীই বিজয়ী হবেন। অপরদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকেরাও দাবি করছেন, যে কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত আছে, সেটা তাঁদেরই ঘাঁটি। তাই শেষ বিজয়ের হাসি তাঁরাই হাসবেন।

বেসরকারিভাবে ঘোষিত ২৭ কেন্দ্রের ফলাফলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪৮৪ ভোটে এগিয়ে আছেন। অবশ্য এর আগে থেকেই আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে মেয়র প্রার্থীসহ অনেক নেতা-কর্মী একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে দেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের ফলাফল আসতে থাকার পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। কোনো কেন্দ্রে একবার আওয়ামী লীগ এগিয়ে, তো আরেকবার বিএনপি। ২৭টি কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে দুদলের মধ্যে হিসাবনিকাশ চলতে থাকে।

রাত সোয়া ৮টার দিকে নির্বাচন কার্যালয়ে আসা ২২টি কেন্দ্রের মোট ফলাফলে দেখা যায়, বিএনপির প্রার্থী ১৪৮ ভোটে এগিয়ে। এ সময় বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটে। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে নির্বাচন কার্যালয়ের বেসরকারিভাবে ঘোষিত ২৭ কেন্দ্রের ফলাফলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪৮৪ ভোটে এগিয়ে আছেন। অবশ্য এর আগে থেকেই আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে মেয়র প্রার্থীসহ অনেক নেতা-কর্মী একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুনসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর ২৭ কেন্দ্রের ফলাফলের ভোটের পার্থক্য স্থগিত কেন্দ্রের ভোটের চেয়ে কম হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা-কর্মী ও দ্বিতীয় মেয়াদে মো. পারভেজ মিয়া মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তবে এ ব্যাপারে বিএনপিকে অনেকটা নীরব থাকতে দেখা গেছে।

বিএনপির মেয়র প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকেরা বলেছেন, কিশোরগঞ্জে শহরের ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের (পূর্ব তিনতলা ভবন) কেন্দ্রে ১ হাজার ৮৫২টি ভোট রয়েছে। এখানে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হলে বিএনপি অনায়াসে ৪৮৪ ভোট অতিক্রম করে সহজে বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারে। কারণ, এ এলাকায় বিএনপির ঘাঁটি। এর আশপাশের কেন্দ্রের ফলাফলে বিএনপির প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন।

তবে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা দাবি করেছেন, শহরের নিউটাউন এলাকায় অবস্থিত ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের স্থগিত হওয়া কেন্দ্রের পাশেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকার বাড়িসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বাড়ি। তাই এখানে আওয়ামী লীগও ছেড়ে কথা বলবে না। ভোটের মাধ্যমে তাঁদের দলীয় প্রার্থীকে তাঁরা বিজয় উপহার দেবেন।

ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা কয়েকটি কেন্দ্রে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল। তবে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও সহযোগিতার জন্য দখল করতে ব্যর্থ হয়।
মো. ইসরাইল মিঞা, বিএনপির প্রার্থী

বিএনপির নেতা–কর্মীরা বলেন, শনিবার সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর বিএনপির ভোটাররা দলে দলে ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের (পূর্ব তিনতলা ভবন) কেন্দ্রে ভোট দিতে যান। এটা দেখে দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী জোরপূর্বক ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালান। এ সময় উভয় দলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রটি স্থগিত করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশ্রাফুল আলম বলেন, স্থগিত হওয়া কেন্দ্রে আবার ভোট গ্রহণের বিষয়ে শনিবার রাতেই নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে এ কেন্দ্রে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির প্রার্থী মো. ইসরাইল মিঞা বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা কয়েকটি কেন্দ্রে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল। তবে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও সহযোগিতার জন্য দখল করতে ব্যর্থ হয়।’

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মো. পারভেজ মিয়া কেন্দ্র দখলের চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিই অনেক জায়গায় জোরপূর্বক ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যে কেন্দ্রে ফলাফল স্থগিত হয়েছে, তার জন্য তারাই (বিএনপি) দায়ী।