কীর্তিনাশার ১০টি স্থানে ভাঙন, ঝুঁকিতে সড়ক-সেতু

কীর্তিনাশা নদীতে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে সড়ক ও সেতু। সোমবার শরীয়তপুর সদর উপজেলার পূর্ব কোটাপাড়া এলাকায়
প্রথম আলো

পানি বাড়ায় শরীয়তপুরে কীর্তিনাশা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে সড়ক। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের কোটাপাড়া সেতুটিও ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ায় উদ্বিগ্ন এলাকার মানুষ। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কীর্তিনাশা নদীর ১০টি স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে।

শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর নড়িয়া থেকে কীর্তিনাশা নদীর প্রবাহ শুরু। নড়িয়া ও সদর উপজেলার ওপর দিয়ে নদীটি মাদারীপুর সদরের রাজারচর এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। নড়িয়া ও সদর উপজেলার আটটি স্থানে এ বছর কীর্তিনাশা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে নড়িয়ার বৈশাখীপাড়া, পাঠানা বাড়ি, ভোজেশ্বর, চান্দনী, শরীয়তপুর সদরের পূর্ব কোটাপাড়া, কোটাপাড়া বাজার, চর ডোমসার, রাজগঞ্জ, চর স্বর্ণ ঘোষ ও দাদপুর এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবোর ঠিকাদারেরা।

তিন দিন ধরে পদ্মা নদীতে পুনরায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই পানির চাপ ও স্রোত বেড়েছে কীর্তিনাশায়। ভাঙনকবলিত ওই স্থানগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। সদরের কোটাপাড়া এলাকায় আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। পূর্ব কোটাপাড়া-প্রেমতলা সড়কটির কিছু অংশ ভাঙনে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের কীর্তিনাশা নদীতে থাকা কোটাপাড়া সেতুটি।

কীর্তিনাশা নদীতে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে সড়ক ও সেতু। সোমবার শরীয়তপুর সদর উপজেলার পূর্ব কোটাপাড়া এলাকায়
প্রথম আলো

সোমবার কীর্তিনাশা নদীর কোটাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন ঠেকানোর জন্য বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। পূর্ব কোটাপাড়া-প্রেমতলা সড়কের এক পাশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে ওই ভাঙা সড়ক দিয়ে যানবাহন চলছে। ভাঙনের ওই স্থান থেকে ২০০ মিটার দূরত্বে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়ক। সড়কের ওই স্থানে রয়েছে ১১০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু।

পূর্ব কোটাপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, এ এলাকায় নদীভাঙন ছিল না। দুই বছর যাবৎ অল্প অল্প করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ বছর ভাঙনে জমি ও সড়কের অংশ বিলীন হয়েছে। এখন আবার ভাঙনে সড়কের অংশ বিলীন হওয়ায় সবাই ভয়ের মধ্যে আছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে ঢাকায় যাতায়াতের সড়কের একটি বড় সেতু।

পূর্ব কোটাপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে নদীর তীরে বাজার। কখনো ভাঙনের আতঙ্ক ছিল না। এ বছর হঠাৎ বাজারের অংশে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে, তাতে টিকবে বলে মনে হয় না। বিষয়টি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, কীর্তিনাশা নদীর ভাঙন স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ৪৩০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় যাচাই–বাছাই শেষ করেছে। অনুমোদনের জন্য এখন প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, কীর্তিনাশার যে স্থানগুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম প্রথম আলোকে বলেন, কীর্তিনাশা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই–বাছাই করে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে নদীর তীর রক্ষা, খনন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ হবে। ওই প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন হলে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।