কুমিল্লা টাউন হল নিয়ে গণশুনানি হাস্যকর, বললেন সাংসদ আঞ্জুম

কুমিল্লা টাউন হল নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলছেন সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা। আজ সোমবার দুপুরে কুমিল্লা মডার্ন প্রাইমারি স্কুলে
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা টাউন হল ভেঙে আধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণ নিয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানি ‘হাস্যকর কাজ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন সংরক্ষিত আসনের মহিলা সাংসদ ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুম সুলতানা। তিনি বলেছেন, ‘কুমিল্লা টাউন হলের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হবে। আমরা উন্নয়ন চাই, ঐতিহ্য ধ্বংস চাই না। এই ভবন কুমিল্লাবাসীর ঐতিহ্য বহন করছে। উন্নয়নের নামে কোনো অবস্থাতেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজাদের এই স্থাপত্যশৈলীকে ধ্বংস করা যাবে না।’

আজ সোমবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লা মডার্ন প্রাইমারি স্কুলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। কুমিল্লা টাউন হল নিয়ে গণশুনানিকে কেন্দ্র করে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ওই সভা করেন।

কুমিল্লা টাউন হল ভবনটি পুরাকীর্তি হবে কি না, তা নিয়ে ১৯ ডিসেম্বর গণশুনানি হয়। গণশুনানিস্থল কুমিল্লা টাউন হল মাঠের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মুক্তমঞ্চ ছিল কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস) আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন, তাঁর অনুসারী, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের উপস্থিতিতে সরব। গণশুনানিতে সব বক্তাই টাউন হল ভেঙে নতুন দৃষ্টিনন্দন আধুনিক ভবন করার দাবি উপস্থাপন করেন।

আজকের মতবিনিময় সভায় সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা বলেন, ‘কুমিল্লা টাউন হলের অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করতে হলে চারতলাবিশিষ্ট টাউন হল সুপার মার্কেট ভেঙে দিয়ে বহুতল ভবন করা হোক। কিন্তু স্থাপত্যশৈলীর ভবনটি ভাঙা যাবে না। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকেই কুমিল্লা টাউন হল সংরক্ষণ করতে হবে। এটি ভাঙার পরিস্থিতি তৈরি হলে উচ্চ আদালতে রিট করবেন কুমিল্লাবাসী। গ্রিস, মিসরে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আমরাও করব।’

সাংসদ দাবি করে বলেন, কুমিল্লা টাউন হল নিয়ে গণশুনানিতে কুমিল্লার গণমানুষের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না। জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান–নির্ধারিত ব্যক্তিদের ডেকে এনে টাউন হল ভাঙার বক্তব্য দেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদেরও বক্তব্য দিতে বাধ্য করা হয়। তাঁদের সই আগাম নেওয়া হয়। জোরপূর্বক মানববন্ধনে শিক্ষকদের আনা হয়। একই সঙ্গে শিক্ষকেরা সড়কে নেমেছেন কি না, তা মনিটরিং করা হয়। এভাবে ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলা হচ্ছে কুমিল্লা শহরে।

স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন কুমিল্লা টাউন হল।
ফাইল ছবি

সভায় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খাদেম ফিরোজ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক শাহজাহান, ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা পাপন পাল প্রমুখ।

১৮৮৫ সালের ৬ মে ৩ একর ৪৩ শতক জায়গা নিয়ে টাউন হল গড়ে ওঠে। দ্বিতলবিশিষ্ট টাউন হলের নিচতলায় মূল মিলনায়তনে বছরজুড়ে চলে নানা অনুষ্ঠান। গত ২ সেপ্টেম্বর টাউন হল ভেঙে নতুন করে আধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সভা হয়। ওই খবর জানতে পেরে এই স্থাপনা না ভেঙে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর বিবৃতি দিয়েছেন দেশের শিল্প, সাহিত্য–সংস্কৃতি অঙ্গনের ৫০ জন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী। ৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটও বিবৃতি দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ তাঁর দপ্তরে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, কুমিল্লা টাউন হল একটি চমত্কার ভবন। এটা ভাঙা হবে না। এটার (কুমিল্লা টাউন হল) ১৩৫ বছর হয়ে গেছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে টাউন হল ভবনটি প্রত্নসম্পদ হিসেবে সংরক্ষণের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল মান্নান ইলিয়াসের নেতৃত্ব ওই কমিটি হয়। ৯ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় ওই কমিটির প্রতিনিধিদল টাউন হল মিলনায়তন ও এর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।

আরও পড়ুন