কুমিল্লায় বিচারকের খাসকামরায় ঢুকে হত্যা, আসামির মৃত্যুদণ্ড

বিচার চলার সময় কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের তৎকালীন বিচারক বেগম ফাতেমা ফেরদৌসের খাসকামরায় ঢুকে মো. ফারুক (২৪) নামের এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনায় আসামি মো. হাসানকে (২৩) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাব উল্লাহ ওই আদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর হাসানের মা নয়ন বেগম ও তাঁর স্বজনেরা আদালত প্রাঙ্গণে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কুমিল্লার সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. জহিরুল ইসলাম আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. হাসান কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার ভোচপাড়া এলাকার শহিদ উল্লাহর ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী, আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই বেলা ১১টায় কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ ভবনের তৃতীয় তলার ৩০৩ নম্বর কক্ষে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম ফাতেমা ফেরদৌস এজলাসে ওঠেন। এরপর তিনি একে একে মামলার শুনানি করছিলেন। বেলা ১১ টা ২০ মিনিটের দিকে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের একটি হত্যা মামলার আসামি হাসান ছুরি নিয়ে ঢুকে একই মামলার আসামি তাঁর মামাতো ভাই মো. ফারুককে পিঠে ছুরিকাঘাত করেন। ফারুক দৌড়ে বিচারকের এজলাসের চেয়ারের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিচারক ফাতেমা ফেরদৌস চেয়ার থেকে নেমে তাঁর খাসকামরার দিকে রওয়ানা দেন। একপর্যায়ে আত্মরক্ষার জন্য ফারুক তাঁর আগেই খাসকামরায় ঢুকে পড়েন। সেখানে ফারুকের বুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন হাসান। এই সময় এই আদালতে অপর একটি মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার বাঙ্গুরা বাজার থানার এএসআই ফিরোজ আহমেদ। তিনি দৌড়ে গিয়ে হাসানকে ছুরিসহ ধরে ফেলেন। পরে আহত ফারুককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

আহত হাসানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় পরে এএসআই ফিরোজ আহমেদ বাদী হয়ে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় হাসানকে একমাত্র আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত করে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এতে হাসানের নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পরে আদালত ১৯ জনের সাক্ষ্য নেন। আদালতে হাসানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সোমবার তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

হাসানের মা নয়ন বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে নির্দোষ। আদালতে ন্যায্য বিচার পায়নি হাসান। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’