কুমিল্লায় চিকিৎসক–শিক্ষক দম্পতির ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন

নিহত শাহাদাত আলী খান।
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লায় চিকিৎসক ও শিক্ষক দম্পতির ছেলে শাহাদাত আলী খান ওরফে সাবাতকে (৩০) গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার পরিবারের পক্ষ থেকে ওই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করে শাহাদাত হত্যার বিচার দাবি করা হয়েছে।


কুমিল্লা নগরের বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক মো. লিয়াকত আলী খান ও কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাফিয়া আক্তারের ছেলে শাহাদাত গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ বছরের ১ জানুয়ারি সকালে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীর পালপাড়া সেতুর নিচ থেকে শাহাদাত আলী খানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আট মাসেও এই ঘটনার কোনো ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ।

আজ সকাল ১০টার দিকে নিজ বাসায় কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য জানান শাহাদাতের মা–বাবা। তাঁরা জানান, ছেলের লাশ উদ্ধারের আট মাস পর গত বুধবার তাঁদের হাতে প্রতিবেদনটি আসে।


পরিবারের কাছে থাকা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শাহাদাত আলী খানের গলার সামনে ও পেছন থেঁতলানো ছিল। বাঁ হাতের পেছনের দিকে ও সামনের দিকে চারটি ছেঁচড়ানো দাগ ছিল। ডান কবজিতে একটি গোলাকার ক্ষত ছিল। মস্তিস্ক ও ঝিল্লি জমাটবাঁধা। মাথার সামনে ও পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছিল। গলার সামনের ও পাশের দিকে অনেকগুলো থেঁতলানো স্থান পাওয়া গেছে। শাহাদাতের পরনের জ্যাকেট ও টি–শার্ট ছেঁড়া ছিল। রাসায়নিক পরীক্ষা ও ভিসেরা পরীক্ষায় কোনো ক্ষতিকারক দ্রব্য পাওয়া যায়নি।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২টার পর থেকে শাহাদাত আলী খানকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না পরিবারের সদস্যরা। এরপর গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শাহাদাতের বাবা লিয়াকত আলী খান কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি সকালে কুমিল্লার গোমতী নদীর পালপাড়া সেতুর নিচে শাহাদাতের লাশ ভাসতে দেখেন এলাকাবাসী। এরপর পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। ওই দিন বেলা দেড়টায় চিকিত্সক লিয়াকত আলী খানকে ফোনে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর তিনি লাশটি ছেলে শাহাদাতের বলে শনাক্ত করেন।

শাহাদাতের গায়ে ছাইরঙা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, জ্যাকেট ও টি–শার্ট ছিল। হাত কালো স্কসটেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল। ওই দিন বিকেলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২ জানুয়ারি চিকিৎসক লিয়াকত আলী খান এই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেওয়া হয়।

চিকিৎসক লিয়াকত আলী খান বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা আছে, আমার ছেলেকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এখন পুলিশের দায়িত্ব খুনিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা।’


শাহাদাতের মা রাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। আমি চাই সত্যিকারের খুনিরা ধরা পড়ুক।’


শাহাদাতের একমাত্র বোন কুমিল্লার ময়নামতি মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন খান ভাই হত্যার বিচার চেয়ে বলেন, ‘আমার ভাই হিরের টুকরা ছেলে ছিল। খুনসুটি ও আড্ডায় মুখর থাকত, তথ্যপ্রযুক্তি ও ইংরেজিতে দক্ষ ছিল। আমার ছোট ভাইকে যারা হত্যা করেছে, আমি তাদের বিচার চাই।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক মতিউর রহমান বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। খুনিদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। শিগগিরই ফল পাবেন।’