কুলাউড়ায় সম্প্রীতি-সংস্কৃতি রক্ষায় ঘুড়ি উৎসব
পৌষসংক্রান্তি বা মকরসংক্রান্তি মানেই পিঠাপুলি খাওয়া আর ঘুড়ি ওড়ানোর দিন। বাঙালি সংস্কৃতিতে এটি একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব উদ্যাপন করা হয়। দিনটি উপলক্ষে নতুন ধানের চাল গুঁড়া করার ধুম পড়ে। চালের গুঁড়া দিয়ে ঘরে ঘরে তৈরি হয় নানান স্বাদের পিঠাপুলি। গ্রামবাংলার কোথাও বসে জমজমাট মাছের মেলা, কোথাও হয় ঘুড়ি উৎসব। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হলিছড়া চা-বাগানের পালটিলা এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার আয়োজন করা হয়েছিল সে রকমই এক মনমাতানো ঘুড়ি উৎসবের।
চা-বাগানের ভেতরে উঁচু টিলার ওপরে রং-বেরঙের ঘুড়ি বিকেলের আকাশকে বর্ণিল করে রাখে আজ। ‘রঙিন ঘুড়ির আহ্বানে জেগে উঠুক সম্প্রীতি, বেঁচে থাকুক বাংলার শুদ্ধ সংস্কৃতি’ এই স্লোগান ধারণ করে ‘প্লাটুন টুয়েলভ’ নামের স্থানীয় শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন এ উৎসবের আয়োজন করে।
পৌষসংক্রান্তি বা মকরসংক্রান্তি মানেই পিঠাপুলি খাওয়া আর ঘুড়ি ওড়ানোর দিন। বাঙালি সংস্কৃতিতে এটি একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব উদ্যাপন করা হয়।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে দেখা যায়, উৎসবে অংশ নিতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন পালটিলায় ছুটে এসেছেন। এর মধ্যে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা বেশি। অনেকের হাতেই নাটাই, তাঁরা ঘুড়ি ওড়াতে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ কেবল দাঁড়িয়ে তা দেখছেন। অনুষ্ঠানস্থলের এক পাশে সংগঠনের কয়েকজন সদস্য দুধপুলি, চুই, ঝিনুক, গোলাপ, নকশি, পাটিসাপটাসহ নানা পদের পিঠার স্টল বসিয়েছেন। কেউ কেউ সেসব পিঠা কিনে খাচ্ছেন। সেখানে একটি স্টলে ঘুড়িও বিক্রি হচ্ছে। অনেকে লোকজ বিভিন্ন গানের তালে তালে দল বেঁধে নাচছেন।
আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, বেলা তিনটার দিকে মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদ সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ সময় স্থানীয় ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মমদুদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ঘুড়ি উৎসবে যোগ দিতে আসা ফ্রান্সপ্রবাসী গণমাধ্যমকর্মী লুৎফুর রহমান বলেন, গ্রামগঞ্জে এখন আগের মতো ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যায় না। এ উৎসবের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম শিকড়ের সন্ধান পাবে। প্লাটুন টুয়েলভের মতো অন্যান্য সংগঠনও দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসবে, প্রত্যাশা রাখেন তিনি।
ঘুড়ি ওড়াতে ব্যস্ত তানিয়া আক্তার নামের স্থানীয় এক তরুণী বলেন, ‘ছোটবেলা বাড়ির উঠানে ভাইদের সঙ্গে ঘুড়ি ওড়াতাম। একসময় সেখানে পাকা ঘর উঠে যায়। অনেক দিন পর ঘুড়ি ওড়াতে পেরে ভালোই লাগছে।’
উৎসব দেখতে আসা কুলাউড়া বন্ধুসভার উপদেষ্টা শহীদুল ইসলাম বলেন, ঘুড়ি উৎসব বিলুপ্তপ্রায়। প্লাটুন টুয়েলভের এ আয়োজন অব্যাহত থাকুক। এ উৎসব সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক, এটাই তাঁর প্রত্যাশা।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মেহেদি সাদি বলেন, ঘুড়ি উৎসব বাঙালি সংস্কৃতির একটি অংশ। বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধরে রাখতেই এই আয়োজন। তিনি বলেন, উৎসবে ৫০ জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে উৎসব শেষ করা হয়।