কুলিয়ারচর পৌরসভা নির্বাচন: এখনো দুই পরিবারের নিয়ন্ত্রণে

নুরুল মিল্লাত ও হাসান সারোয়ার

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরবাসী পৌরসভার নাগরিক হন ১৯৯৯ সালে। এর মধ্যে চার-চারটি নির্বাচন হয়েছে। পঞ্চম নির্বাচন হবে ১৬ জানুয়ারি। হয়ে যাওয়া চারটি ও আসছে নির্বাচনে প্রার্থিতার চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোনোবারই এখানে মেয়র পদে দুজনের বেশি প্রার্থী ছিলেন না। দুজন প্রার্থীই বরাবরের মতো বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। এখানকার রাজনীতির মতো মেয়র পদে এই দুই দলের প্রার্থিতাও নিয়ন্ত্রণ করছে কুলিয়ারচরের বড় দুটি ব্যবসায়ী পরিবার।

ওই দুটি পরিবারের মধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন কুলিয়ারচর কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুছা মিয়া। বিএনপির রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন শিল্পগোষ্ঠী আলম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফুল আলম।

স্থানীয় লোকজন জানান, মুছা মিয়া দেশের খ্যাতিমান চিংড়ি রপ্তানিকারক। চিংড়ির আঞ্চলিক নাম ইছা মাছ। এ কারণে স্থানীয় লোকজন মুছা মিয়ার পরিবারকে অনেকটা সম্মান দেখিয়ে ইছা পরিবার হিসেবে সম্বোধন করেন। আর আলম গ্রুপের কারখানায় তৈরি হয় ‘পঁচা’ সাবান। এ কারণে আলমের পরিবারকে এলাকার লোকজন সম্মান দিয়ে পচা পরিবার বলে থাকেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এই দুই পরিবারের বাইরে গিয়ে এখানকার রাজনীতির মাঠে কেউ তেমন সুবিধা করতে পারেননি। অদূর ভবিষ্যতেও কেউ সুবিধা করতে পারবেন না, এমন বিশ্বাস থেকে অন্য কেউ প্রার্থী হওয়ার সাহসও দেখান না। এ কারণে মেয়র পদে এই দুই পরিবারের অনুগত ছাড়া কেউ প্রার্থী হতে পারেননি।

পৌর পরিষদ সূত্র জানায়, দ্বিতীয় শ্রেণির এই পৌরসভার আয়তন ১১ দশমিক ৩৮ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে ভোটার রয়েছেন প্রায় ২৭ হাজার।

প্রতিষ্ঠার বছর পৌরসভার প্রশাসক হন মুছার ছোট ভাই আবুল হাসান। ৯ মাস পর প্রথম নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে জয় পান। দ্বিতীয় নির্বাচনে জয় আসে শরীফুল আলমের সমর্থিত নুরুল মিল্লাতের। তৃতীয় নির্বাচনে আবার আবুল হাসান মেয়র হন। মেয়র থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান। উপনির্বাচনে মেয়র হন মুছার ছেলে ইমতিয়াজ বিন মুছা। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা কমিটির সহসভাপতি সৈয়দ হাসান সারোয়ার। তিনি এখন মুছা পরিবারের ঘনিষ্ঠ।

হাসান সারোয়ার বলেন, এ কথা ঠিক, কুলিয়ারচরে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারতন্ত্র টিকে আছে। তবে তিনি নিজেকে নৌকার প্রার্থী ভাবতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

এবার নির্বাচনে এখানে ধানের শীষের প্রার্থী নুরুল মিল্লাত। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব। শরীফুল আলমের কয়েকজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির মধ্যে নুরুল মিল্লাত অন্যতম। বলা হয়ে থাকে, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আলম-মিল্লাতের রসায়নে এতটুকু ভাটা পড়েনি।

নুরুল মিল্লাতের বক্তব্য, ‘দলে আলমের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলেই এক কখনো দুই হয় না।’

এখানকার প্রার্থিতা দুই পরিবারে আটকে থাকার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বলয় দুটির কর্ণধারেরা। মুছা পরিবারের ইমতিয়াজ বিন মুছা বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘এ কথা সত্য, আমাদের নিয়ন্ত্রণ না থাকলে প্রার্থিতার শৃঙ্খলা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। একের সঙ্গে শূন্য যোগ হয়ে দশ হয়ে যেতে পারে। তখন দল ও ফলাফলে ক্ষতি হবে।’

শরীফুল আলম জেলা বিএনপির সভাপতি। তাঁর মতে, কুলিয়ারচরে দুই পরিবারের প্রার্থীর সংস্কৃতি শুদ্ধ রাজনীতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে তিনি নেতা-কর্মীদের মতামত ছাড়া সিদ্ধান্ত নেন না। সে কারণে প্রার্থিতা নিয়ে কারও ভিন্নমত থাকে না।