কুলিয়ারচরে ইউএনওর বাসায় হামলায় ২ মামলা, সহস্রাধিক আসামি

এ হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে
প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রিসোর্ট হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে ঘেরাওয়ের ঘটনার জেরে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সরকারি বাসভবনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় ১ হাজার ৩৩ জনকে আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে। আজ সোমবার উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি এবং গতকাল রোববার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে অপর মামলাটি হয়।

উপজেলা প্রশাসনের করা মামলাটির বাদী ইউএনও রুবায়াৎ ফেরদৌসী। মামলাটি হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা ও সম্পদ নষ্ট করার ধারায়। মোট অভিযুক্ত ৫০০ জন। কারও নাম উল্লেখ নেই। অপর মামলাটি করা হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও পুলিশকে লাঞ্ছিত করার ধারায়। বাদী পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সাদ্দাম হোসেন। মোট অভিযুক্ত ৫৩৩ জন। এর মধ্যে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ আছে। প্রধান আসামি উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের রিমন মিয়া (২২)।

এ হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন পৌর শহরের পূর্ব গাইলকাটা এলাকার মেজবাহ উদ্দিন (৪০), মো. আবাবিল (৩২), বরখারচর এলাকার মো. উমর (৩২), শরীফ মিয়া (২৮) ও শামিম মিয়া (২২)।

এ হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন পৌর শহরের পূর্ব গাইলকাটা এলাকার মেজবাহ উদ্দিন (৪০), মো. আবাবিল (৩২), বরখারচর এলাকার মো. উমর (৩২), শরীফ মিয়া (২৮) ও শামিম মিয়া (২২)।

পুলিশ জানায়, মামুনুল হককে ঘেরাওয়ের ঘটনা জানার পর কুলিয়ারচরে উত্তেজনা ছড়ায়। বিশেষ করে ঘেরাওয়ের ঘটনার দিন গত শনিবার রাত সাড়ে নয়টার পর পৌর শহরে বিক্ষোভ-মিছিল বের হয়। মিছিলটি আসে উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের নাজিরদীঘি গ্রাম থেকে। বিক্ষোভকারীরা সংখ্যায় ছিল কয়েক শ। হাতে ছিল লাঠিসোঁটা। অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগই নাজিরদীঘি গ্রামের একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বয়সে তরুণ।

হামলায় আমার সরকারি বাসভবন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই কারণে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রুবায়াৎ ফেরদৌসী, কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)

মামুনুল হকের পক্ষে স্লোগান দিয়ে তারা প্রথমে ইউএনওর সরকারি বাসভবনে হামলা চালায়। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় এবং মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ গণগ্রন্থাগার বিক্ষোভকারীদের রোষানলে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটপাটকেলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পাঁচটি গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লেগে যায় প্রায় দুই ঘণ্টা। ঘটনার রাতে কাউকে আটক করা যায়নি। গতকাল রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের আজ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়েছে।

ইউএনও রুবায়াৎ ফেরদৌসী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলায় আমার সরকারি বাসভবন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই কারণে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

আটক ব্যক্তিদের মামলার আসামি হিসেবে আদালতের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মিজানুর রহমান, পরিদর্শক (তদন্ত), কুলিয়ারচর থানা

পুলিশের পক্ষ থেকে করা মামলার বাদী সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানান, আটক ব্যক্তিদের মামলার আসামি হিসেবে আদালতের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় পুলিশের মামলাটির প্রধান আসামি রিমন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে নাম উল্লেখ আছে এমন কয়েকজন অভিযুক্ত প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, পুলিশের মামলায় যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের অনেকে ঘটনার দিন এলাকায় ছিলেন না। তবু তাঁদের অনেককে মামলার আসামি করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর ‘রয়েল রিসোর্ট’ নামের একটি রিসোর্টে গত শনিবার অবকাশযাপনে গেলে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে প্রায় দুই ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখা হয়। পুলিশ বলছে, মামুনুলের সঙ্গে এক নারীসহ এখানে অবস্থানের খবর পেয়ে স্থানীয় কিছু লোক, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর কক্ষটি ঘেরাও করে রাখেন। আর মামুনুল হক বলছেন, দ্বিতীয় স্ত্রীসহ অবকাশযাপনে গেলে কিছু লোক তাঁকে নাজেহাল করেন। পরে সন্ধ্যায় স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও হেফাজত ইসলামের নেতা-কর্মীরা রিসোর্টটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে মামুনুলকে নিয়ে যান।