কুষ্টিয়ার জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২০ শয্যার বিপরীতে ২০০ রোগী

শয্যাসংকটের কারণে অধিকাংশ শিশুকেই হাসপাতালের ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে শুইয়ে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে
ছবি: তৌহিদী হাসান

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে হঠাৎ করে শিশু রোগীর চাপ বেড়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই ঠান্ডা-জ্বর, আবার কেউ কেউ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যা আছে ২০টি। কিন্তু আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত এখানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২০০।

শয্যার তুলনায় ১০ গুণ বেশি রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। শয্যাসংকটের কারণে অধিকাংশ শিশুকেই হাসপাতালের ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে শুইয়ে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীর স্বজনেরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জেলায় ঠান্ডা, জ্বর, নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফলে এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মৌসুমি আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

আজ দুপুরে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও এর সামনের বারান্দার মেঝেতে রোগীতে ঠাসা। কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। বারান্দার পাশে মেডিসিন ওয়ার্ডেও শিশু রোগী রাখা হয়েছে। গাদাগাদি করে সেখানে বিছানা ফেলা হয়েছে। ওয়ার্ডের ভেতরেও ভিড় দেখা গেছে।
বারান্দার মেঝেতে শুইয়ে রাখা আট মাসের শিশু ফাহিমের পাশে বসে আছেন মা মৌসুমী খাতুন। তিনি জানান, কয়েক দিন ধরেই তাঁর ছেলের জ্বর। তবে কোনো উন্নতি না হওয়ায় আজ সকালে তিনি ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

আট মাসের শিশু ফাহিম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসাধীন। আজ দুপুরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

শিশু ওয়ার্ডের নার্স আফরোজা পারভীন বলেন, ছাড়পত্রের চেয়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তির হার বেশি। শয্যার চেয়ে ১০ গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। এতসংখ্যক রোগীকে সামাল দিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ সাইফুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন, বৃষ্টি, গরম ও ঠান্ডার কারণে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের বেশির ভাগের বয়স এক বছরের মধ্যে। বাড়িতে বড়রা আক্রান্ত হলে শিশুদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ সময় শিশুদের প্রতি বাড়তি নজর রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও নার্সসংকট রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা অবকাঠামো। রোগী রাখার জন্য কোথাও তিল পরিমাণ জায়গা নেই। এতে রোগীদের সমস্যা হচ্ছে। তবে সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জেলার সবগুলো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে শিশু রোগীর ভর্তির সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়েছে। চিকিৎসাসেবার পরিধি কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।