কুষ্টিয়ায় রেলের ট্রলিম্যানকে মারধর, আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় এজাহার

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন ট্রলিম্যান শহিদুল ইসলাম
প্রথম আলো

কুষ্টিয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর কাজ করা অবস্থায় রেলওয়ের এক ট্রলিম্যানকে ধরে নিয়ে মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ট্রলিম্যানকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়া পৌরসভার স্থানীয় ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ খান রনি ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে। ওয়াহেদ খান কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খানের ছেলে।

এ ব্যাপারে ট্রলিম্যানের ছেলে মাসুদ রানা বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে রাতেই কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি এজাহার জমা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি এজাহার পেয়েছি। একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে। আজকের মধ্যে মামলা রজু করা হবে বা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আজ শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে শুয়ে আছেন ট্রলিম্যান শহিদুল ইসলাম (৫২)। তাঁর ভাষ্যমতে, তিনি মিলপাড়া এলাকায় রেলওয়ের কুষ্টিয়া উপসহকারী প্রকৌশলী কার্যালয়ে ট্রলিম্যান হিসেবে কর্মরত। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মিলপাড়া এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর থেকেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তিনি কাজ করছিলেন।

ট্রলিম্যানের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জের ধরে রাত আটটার দিকে ওয়াহেদ খান কাজ করা অবস্থায় তাঁকে ধরে স্টেশনে নিয়ে যান। সেখানে অনেক লোকজনের সামনে তাঁকে দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তোলেন। কখনো জামায়াত-বিএনপি, আবার কখনো ট্রেনের চোর বলে আখ্যায়িত করেন। একপর্যায়ে ঘাড় চেপে ধরে লাঞ্ছিত করেন। সেখানে মারধরের পর পাশের বাজারে মিষ্টির দোকানের সামনে নিয়ে আবার মারধর করা হয়। এ সময় তাঁর ছেলে মাসুদ রানা রক্ষা করতে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়। মারধরের তিনটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, পূর্বশত্রুতার জেরে ওয়াহেদ তাঁকে লাঞ্ছিত করেছেন। শত্রুতা কী নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রেলের কোয়ার্টারে অবৈধভাবে ওয়াহেদের এক আত্মীয় বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অপসারণ করে বাসাটি খালি করে। ওয়াহেদ মনে করেন, এমনটা আমার কারণে হয়েছে।’

কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক সাহেব আলী বলেন, শহিদুল ইসলামকে রাতে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর ছেলেকেও মারধর করা হয়েছে। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতেই আছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াহেদ খান রনি দাবি করেন, শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে রেলের সম্পদ লুট করছেন। তিনি যে ট্রেনের বিভিন্ন কিছু চুরি করেন, এটা এলাকার সবাই জানেন। ট্রেন দুর্ঘটনার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা আছে। তাঁকে কোনোভাবেই মারধর করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। মুখ ধরে তোলা হয়েছিল কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জনগণ যখন শহিদুলের মুখ দেখতে চাইছিলেন, তখন মুখ তুলে ধরতে এমন করা হয়েছে। যাতে সবাই তাঁকে দেখতে পায়।’