কুড়িগ্রামে পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যু

মোজাফফর হোসেন
মোজাফফর হোসেন

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে পুলিশ হেফাজতে মোজাফফর হোসেন (৩০) নামের একজন মারা গেছেন। পুলিশ বলছে, আটকের পর থানায় নিয়ে এলে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। তবে পরিবারের অভিযোগ, নির্যাতনের কারণে থানা হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশ সুপার (এসপি) তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন।

মোজাফফর উপজেলার উত্তর ছাট গোপালপুর গ্রামের আবদুল ওহাবের ছেলে। তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন।

ভূরুঙ্গামারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আউয়াল বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় পুলিশ উপজেলার ঢলডাঙ্গা ঝালবাজার এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশ একটি অটোরিকশাকে থামতে বললে সেখান থেকে একজন যাত্রী পালিয়ে যান। পরে অটোরিকশাচালক মোজাফফরকে আটক করে পুলিশ। তাঁর অটোরিকশার সিটের নিচে সাড়ে ৩ কেজি গাঁজা পাওয়া যায়। তাঁকে রাত আটটার দিকে থানায় নেওয়া হয়। থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নিহত মোজাফফরের বাবা আবদুল ওহাবের দাবি, তাঁর ছেলে অটোরিকশাচালক। অটোরিকশার যাত্রী এক মাদক চোরাকারবারিকে পুলিশ ধাওয়া করলে ওই ব্যক্তি পালিয়ে যান। পরে পুলিশ মোজাফফরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় নির্যাতনে তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশ গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোজাফফর নামের এক যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনি যক্ষ্মা ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ১৫ মিনিট পরই পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবারও গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রেদওয়ান ফেরদৌস বলেন, মৃত অবস্থায় ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে মোজাফফরকে হাসপাতালে নিয়ে আসে ভূরুঙ্গামারী থানার পুলিশ।

এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ কবির বলেন, আটক যুবক এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী ও মাদক পাচারকারী। তিনি শ্বাসকষ্ট ও যক্ষ্মায় ভুগছিলেন। অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল না।

কুড়িগ্রামের এসপি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ঘটনাটি তিনি জেনেছেন। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের কোনো দায় আছে কি না, তা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।