কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, বেড়েছে দুর্ভোগ

ধরলা নদীর পাড়ের গ্রামগুলো এভাবে জলাবদ্ধ হয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছেন। মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁছগাছি ইউনিয়নের ছত্রপুরেপ্রথম আলো

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। আজ মঙ্গলবার ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। বন্যার পানি না নামায় নদীভাঙন ও ফসলহানির কারণে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আজ সকালে জানায়, ধরলা নদীর পানি কিছুটা কমলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি অনেকটা বেড়েছে। ধরলা নদীর সেতু পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপৎসীমার এখনো ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৬ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। আর ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৩ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় চর ও দ্বীপচরের বানভাসি লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। বন্যা এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। তা ছাড়া নদ-নদীর অববাহিকা ও চরাঞ্চলে বন্যার পানি থাকায় সেখানকার মানুষ গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পাঠাগার আন্দোলনের কর্মী নুরুল ইসলাম বলেন, ধরলা নদীর উৎসমুখ ফুলবাড়ী উপজেলার গোড়ক মণ্ডল থেকে শেষ অর্থাৎ মিলনস্থল বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার অববাহিকার দুই পারের নদীর তীরবর্তী এলাকা বন্যার পানিতে সয়লাব হয়ে আছে। মানুষ পানিবন্দী। ফসলহানি ও ভাঙনে তারা অনেকটা দিশেহারা। ভাঙন চলছে বুড়াবুড়ি ও হাতিয়া এলাকায়।

ধারদেনা করে আমন আবাদ করলেও বন্যায় সব নষ্ট হয়্যা গেছে। পরপর ৫ বার বন্যায় হামার আমন ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেল। সেই সঙ্গে কলা, ভুট্টা, বেগুন, কাশ, পাটসহ শাকসবজি নষ্ট হয়ে গেইছে। কীভাবে আমরা বাঁচম?
নবীজ উদ্দিন, রাজারহাট উপজেলার জয় কুমার এলাকার কৃষক

সরেজমিনে আজ রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে দেখা যায়, কিং ছিনাই ও চতুর্ভুজ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত। এ সময় সাইকেলে খড় নিয়ে আসছিলেন কৃষক হাশেম আলী। তিনি বলেন, ‘গরুর খড় ও পোয়াল (খড়) পাওয়া যাচ্ছে না। দামও অনেক বেশি। ৫০০ টাকার পোয়াল ১ হাজার টাকা দিয়া আনলাম। বন্যার কারণে খড় ও গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে।’

কুড়িগ্রামে নদ–নদীর পানি তীব্র বেগে তীরে আছরে পড়ে শুরু হয়েছে ভাঙন। মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা এলাকায়
প্রথম আলো

একই ইউনিয়নের জয় কুমার এলাকার কৃষক নবীজ উদ্দিন বলেন, ‘ধারদেনা করে আমন আবাদ করলেও বন্যায় সব নষ্ট হয়্যা গেছে। পরপর ৫ বার বন্যায় হামার আমন ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেল। সেই সঙ্গে কলা, ভুট্টা, বেগুন, কাশ, পাটসহ শাকসবজি নষ্ট হয়ে গেইছে। কীভাবে আমরা বাঁচম? ধারদেনা করি দূর থেকি বিচন (ধানের চারা) কিনি নতুন করি চারা গাড়ছি। এখন তো আর বুদ্ধি নাই।’

এদিকে জেলার বিভিন্ন নদ–নদীতে তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সদর উপজেলার শুভারকুটি এলাকার পাঙারচরে পাউবোর শহর রক্ষা বাঁধের ৩০০ মিটারের প্রায় ৫০ মিটার ধসে গেছে। যাত্রাপুর ইউনিয়নের গারুহারা এলাকায় দেখা যায়, সেখানে চলছে দুধকুমার নদের ভাঙন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে যাত্রাপুর বাজার, ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা ও মসজিদ। স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, যাত্রাপুর থেকে গারুহারা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা ব্যাপক ভাঙছে। কয়েক হাজার পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। এলাকার মানুষ নদীভাঙন রোধে মিছিল–মিটিং করেছে। কাজ হয়নি।

পাউবো জানায়, জেলার ১৬টি নদ-নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৭২ কিলোমিটার। বন্যা ও নদীভাঙন প্রবল। জেলায় প্রায় ৩৬টি পয়েন্টে ভাঙন চলছে। কৃষি বিভাগ জানায়, পঞ্চম দফা বন্যায় জেলার ১৮ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, পানি ধীরে ধীরে কমে আসছে এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। নদীভাঙন এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। নদীতীরবর্তী মানুষদের রক্ষায় বেশ কিছু প্রকল্প করে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে এলে কাজ শুরু করা যাবে। কাজ হলে বন্যার প্রবণতা ও ভাঙন কমে আসবে।