কুড়িয়ে পাওয়া শিশু পেল মা-বাবার কোল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কুড়িয়ে পাওয়া পাঁচ মাস বয়সী শিশু
প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়কের পাশ থেকে কুড়িয়ে পাওয়া এক শিশুকে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দিয়েছেন আদালত। শিশুটির বয়স আনুমানিক পাঁচ মাস। গত রোববার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের দুবলা গ্রামের একটি সড়কের পাশের কলাগাছের ঝোপে কাপড় দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এরপর চার দিন শিশুটি আদালতের হেফাজতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ছিল। আজ বৃহস্পতিবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিঃসন্তান শিক্ষক দম্পতি শিশুটিকে দত্তক পেলেন।

ওই শিক্ষক দম্পতি সরকারি কলেজে চাকরি করেন। এর মধ্যে স্ত্রী ফেনীর একটি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং স্বামী চাঁদপুরের একটি সরকারি কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে রয়েছেন।

আদালত ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওই শিক্ষক দম্পতি আজ পাঁচ লাখ টাকার বন্ডে শিশুটিকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করতে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ পারভেজ বিকেলে শিশুটিকে ওই শিক্ষক দম্পতিকে দত্তক দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত হোসেনকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, শওকত হোসেন বিকেল চারটার দিকে শিশুটিকে ওই শিক্ষক দম্পতির কোলে তুলে দেন। এ ক্ষেত্রে আদালত শর্ত দিয়েছেন, যদি কখনো শিশুটির প্রকৃত মা-বাবা উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে শিশুটিকে নিতে চান, তাহলে শিশুটিকে প্রকৃত অভিভাবকের কাছে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন তাঁরা। এ ছাড়া শিশুটির সঠিক পরিচর্যা ও দেখভাল হচ্ছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

ওই শিক্ষক দম্পতি আজ পাঁচ লাখ টাকার বন্ডে শিশুটিকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করতে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, শওকত হোসেন বিকেল চারটার দিকে শিশুটিকে ওই শিক্ষক দম্পতির কোলে তুলে দেন।

গত রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঢাকা-আগরতলা মহাসড়কের পাশে দুবলা গ্রামের একটি সড়কের পাশের কলাগাছের ঝোপে কাপড় দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় শিশুটিকে কে বা করা রেখে যায়। সেখানে শিশুটি পড়ে থাকতে দেখেন দুবলা গ্রামের কৃষক জহিরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী পারভীন আক্তার। কান্নার শব্দ শুনে তাঁরা শিশুটিকে উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। বিষয়টি অবগত হয়ে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা পুলিশকে অবহিত করেন। ওই দিন রাতেই সদর থানা-পুলিশ শিশুটিকে জহিরুল ইসলামের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়। প্রকৃত অভিভাবকের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্সদের সঙ্গে জহিরুল ও তাঁর স্ত্রী শিশুটিকে দেখাশোনা করেন। এই দম্পতিসহ আরও ১০ নিঃসন্তান দম্পতি শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আজ বেলা আড়াইটার দিকে আদালত ওই শিক্ষক দম্পতিকে নির্বাচন করে আদেশ জারি করেন। আদালতের নির্দেশে বিকেল চারটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত হোসেন শিশুটিকে দত্তকপ্রাপ্ত শিক্ষক মায়ের কোলে তুলে দেন।

শিশুটিকে আমরা যথাযথভাবে আদর, স্নেহ ও ভালোবাসায় লালন-পালন করব। তাকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলব।
দত্তকপ্রাপ্ত শিক্ষক দম্পতি

নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক দত্তকপ্রাপ্ত শিক্ষক দম্পতি প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে তাঁরা যথাযথভাবে আদর, স্নেহ ও ভালোবাসায় লালন-পালন করবেন। তাকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে শিশুটিকে বিকেলে দত্তক পাওয়া শিক্ষিকার কোলে তুলে দিয়েছেন তাঁরা।