কুয়াকাটায় পুণ্যস্নান, পুণ্যার্থীর উপস্থিতি ছিল কম

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় রাস উৎসব ঘিরে পুণ্যার্থীদের নানা আয়োজন
প্রথম আলো

প্রতিবছর পূর্ণিমার তিথির এই দিনে থাকে লোকে লোকারণ্য। বসে দোকানপাট-মেলা। বাঁশির সুর, মানুষের হইচইয়ে স্পন্দিত হয় গোটা এলাকা। এবার এর কিছুই ছিল না। হিন্দু পুণ্যার্থীদের সেভাবে আগমন ঘটেনি। বলতে গেলে নিয়ম রক্ষার যতটুকু প্রয়োজন ছিল, তা পালন করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার শত বছরের রাস উৎসব। করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছরের রাস পূর্ণিমার সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য গত বছরও ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে রাসের কোনো আয়োজন হয়নি।

কুয়াকাটার রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে রাস মেলার যাবতীয় আয়োজন বাতিল করা হয়। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ কাছাকাছি এলাকার হিন্দু নর-নারীরা শুধু ধর্মীয় আচার পালন করার জন্য কুয়াকাটায় এসেছেন। তাও সীমিত পরিসরে। প্রতিবছর দূরদূরান্ত থেকে হিন্দু পুণ্যার্থীসহ অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষ যেভাবে এ সময় কুয়াকাটায় আসেন, এবার তাঁরা আসতে পারেননি।

শত বছর ধরে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আজ সোমবার ছিল পুণ্যস্নান। কাছাকাছি এলাকার হিন্দু পুণ্যার্থীরা যাঁরা এসেছেন, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে উলুধ্বনি দিয়ে তাঁদের সাগরস্নানে নেমে পড়তে দেখা যায়। আমতলী পৌর শহরের শেফালী রানী কর্মকার বলেন, ‘প্রতিবছরই রাসের এ সময় কুয়াকাটায় আসি। ধর্মীয় আচার পালন করি। শেষে পবিত্র মন নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাই। এবার কুয়াকাটায় এসেছি ঠিকই, কিন্তু তেমন ভালো লাগেনি। পুণ্যার্থীর উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। উৎসব বলতে যা বোঝায়, তার কিছুই ছিল না। তারপরও স্বামী, সন্তানসহ মানত করা ধর্মীয় কাজগুলো করতে পেরেছি। এতটুকুতেও আমরা আনন্দিত।’

কলাপাড়ার নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা গৌতম চন্দ্র হালদার বলেন, ‘দূরের আত্মীয়স্বজন এবার কেউই আসতে পারেনি। করোনা পরিস্থিতির জন্য এবার রাস মেলা বা উৎসব বাতিল হয়েছে। আমরা যারা কাছের মানুষ, কেবল তারাই ধর্মীয় নিয়মকানুন পালন করতে এসেছি। করোনা পরিস্থিতি কেটে যাক, জগতের সব মানুষ শান্তিতে থাকুক, সৃষ্টিকর্তার কাছে আমরা সে প্রার্থনা করেছি।’

হিন্দু পুণ্যার্থীরা যাঁরা কুয়াকাটায় এসেছেন, তাঁরা গতকাল রোববার রাতভর কুয়াকাটার রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় রীতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশগ্রহণ করেন। পুরো রাত জেগে তাঁরা সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য পাওয়ার চেষ্টা করেন। ধর্মীয় আয়োজনের মধ্যে ছিল অধিবাস, ভাগবতপাঠ, গীতাপাঠ, ভক্তিমূলক গান ও নামকীর্তন। সবশেষে উপস্থিত পুণ্যার্থীদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। তবে অনুষ্ঠানস্থলে আগন্তুকদের মাস্ক পরে এবং হাত ধুয়ে ঢুকতে হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করেছে।

কুয়াকাটার স্নান শেষে পুণ্যার্থীরা কলাপাড়া পৌর শহরের মদনমোহন সেবাশ্রমে প্রাঙ্গণে সমবেত হতে শুরু করেছেন। ১১৭ বছর ধরে এখানে ধর্মীয় আচার পালন করার রীতি প্রচলিত রয়েছে, যার জন্য রাধাকৃষ্ণের ১৭ যুগল মূর্তি এ মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। স্নান শেষে ভক্তদের রাধাকৃষ্ণের এসব যুগল মূর্তি দর্শন করার রেওয়াজ রয়েছে। কলাপাড়া পৌর শহরের মদনমোহন সেবাশ্রম প্রাঙ্গণে প্রতিবছর যেভাবে মেলা হয়, এবার তা-ও বাতিল করা হয়েছে।