কুয়াকাটায় শেষ হলো পুণ্যস্নান, লোক সমাগম কম

আজ ভোরে প্রচ্ছন্ন কুয়াশা আর হালকা ঠান্ডায় স্নান করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন পুণ্যার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো পটুয়াখালীর কুয়াকাটার ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবের এ বছরের আয়োজন। আজ শুক্রবার ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে উলুধ্বনি দিয়ে সাগরের পানিতে নেমে পুণ্যস্নান করেন হিন্দু পুণ্যার্থীরা। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে শতবর্ষী এ উৎসব।

কুয়াকাটার রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মণ্ডল বলেন, রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কুয়াকাটায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন সমবেত হন। তবে করোনার কারণে এবার শুধু নিয়ম রক্ষার আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ আশপাশের কিছু এলাকা ছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে তেমন কোনো পুণ্যার্থী এবারের উৎসবে অংশ নেননি।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আশপাশের এলাকার হিন্দু নর-নারীরা সৈকত এলাকায় সমবেত হতে শুরু করেন। এদিকে আজ ভোরে প্রচ্ছন্ন কুয়াশা আর হালকা ঠান্ডায় স্নান করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন পুণ্যার্থীরা। এ সময় পুণ্যার্থীরা শুধু নিজে নয়, স্বামী-সন্তানকেও ধর্মীয়ভাবে সিদ্ধ করতে বাহুতে জড়িয়ে স্নান করেন।

বরিশালের বানারীপাড়ার অঞ্জলি কর্মকার বলেন, ‘প্রতিবছরই রাসের সময় কুয়াকাটায় আসি। ধর্মীয় আচার পালন শেষে পবিত্র মন নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাই। এবার কুয়াকাটায় এসেছি ঠিকই, হিন্দু পুণ্যার্থীর উপস্থিতি তেমন না থাকায় ভালো লাগেনি। এক কথায় রাস উৎসব বলতে যা বোঝায়, সেগুলো কিছুই নেই।’

কলাপাড়ার নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা গৌতম চন্দ্র হালদার জানান, শুধু নিয়ম রক্ষার জন্যই তিনি পরিবার নিয়ে এসেছেন। তাঁর দূরের কোনো আত্মীয়স্বজন কেউ আসতে পারেননি। তবে করোনা মহামারি দ্রুত পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে এবং পৃথিবীর সব মানুষ শান্তিতে থাকবে, সৃষ্টিকর্তার কাছে এমন প্রার্থনা করেছেন বলে জানান তিনি।

পটুয়াখালী, বরগুনাসহ আশপাশের কিছু এলাকা ছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে তেমন কোনো পুণ্যার্থী এবারের উৎসবে অংশ নেননি
ছবি: প্রথম আলো

এর আগে গতকাল রাতভর কুয়াকাটার ‘রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম’ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় রীতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশগ্রহণ করেন পুণ্যার্থীরা। পুরো রাত জেগে তাঁরা সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য পাওয়ার চেষ্টা করেন। ধর্মীয় আয়োজনের মধ্যে ছিল অধিবাস, ভগবত পাঠ, গীতা পাঠ, ভক্তিমূলক গান, নামকীর্তন। সবশেষে উপস্থিত পুণ্যার্থীদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

প্রতিবছর পূর্ণিমার তিথির এদিনে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে কুয়াকাটা সৈকতে প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। সৈকতসহ পুরো এলাকা উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। বাঁশির সুর আর মানুষের কোলাহলে মেতে ওঠে পুরো এলাকা। তবে করোনা মহামারির কারণে এ বছরের আয়োজন ছিল সীমিত।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, প্রতিবছর রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে মেলাসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে করোনা পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে গত দুবছর কুয়াকাটায় কোনো ধরনের আয়োজন থাকছে না। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতি পালন করার জন্য যতটুকু ব্যবস্থা থাকা দরকার কেবল সেটি করা হয়েছে।

এদিকে আজ সকালে পুণ্যস্নান শেষে সকাল থেকে পুণ্যার্থীরা কলাপাড়া পৌর শহরের মদন মোহন সেবাশ্রমে প্রাঙ্গণে সমবেত হতে শুরু করেছেন। ১১৭ বছর ধরে এখানে ধর্মীয় আচার পালন করার রীতি রয়েছে। এতে এই মন্দির প্রাঙ্গণে রাধাকৃষ্ণের ১৭ জোড়া যুগল মূর্তি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী, স্নান শেষে রাসভক্তরা রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি দর্শন করেন। কলাপাড়া পৌর শহরের মদন মোহন সেবাশ্রম প্রাঙ্গণের মেলাও এবার বাতিল করা হয়েছে।