কেঁদে কেঁদে কাদের মির্জার নেতৃত্বে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন জাপা নেতা

কাদের মির্জা ও তাঁর অনুসারীদের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। শুক্রবার রাতে ঢাকার একটি বাসায়
ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীদের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ওরফে স্বপন (৫৯)। গতকাল শুক্রবার রাতে কেঁদে কেঁদে নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

নির্যাতনের শিকার সাইফুল ইসলামের চেতনা ফেরার পর গতকাল রাতে তিনি স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বাসায় গণমাধ্যমকর্মীসহ তাঁকে দেখতে যাওয়া রাজনৈতিক দলের কর্মী ও স্বজনদের প্রশ্নের জবাবে তিনি নির্যাতনের কিছু বর্ণনা দেন। কিন্তু কান্নার কারণে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিতে পারেননি তিনি।

২ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে সাইফুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘কালামিয়া ম্যানশনের সামনে থেকে মির্জা মিয়া (আবদুল কাদের মির্জা) ও তাঁর ৩০ থেকে ৪০ জন লোক আমাকে তুলে নিয়ে যান। মির্জা মিয়া গালি দিয়ে বলেন ধর...। পুলিশও ছিল এ সময়। সেখান থেকে আমাকে হোন্ডায় (মোটরসাইকেল) তুলে নিয়ে পৌরসভার তৃতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে পাঁচটি ব্যানার ছিল। পাঁচ ঘণ্টারে ভাই, ভাই রে ভাই...,’ এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে সাইফুল ইসলাম নিজের মুখমণ্ডল, দুই পা দেখিয়ে বলেন, ‘আমার এগাইন নাই। আল্লাহ রে...ও আল্লাহ।’

কী কারণে তুলে নেওয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কী জন্য নিয়ে গেছে আমি জানি না। ওই খানে নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও করছে। আমার বাবা রাজনীতি করেছেন, আমিও করি। কোনো দিন কারও সঙ্গে ভেজাল হয়নি। আমার থেকে জোর করে কিয়ের কিয়ের লেখা–লেখিয়ে নিয়ে গেছে, আমি কইতাম হাইরতাম ন। ও আল্লাহ, আল্লাহ রে আমার মাথা নাই।’

সাইফুল ইসলামের ছেলে মইনুল ইসলাম আজ শনিবার দুপুর ১২টায় প্রথম আলোকে বলেন, গত দুদিন ঢাকার একটি বাসায় রেখে তাঁর বাবাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁর অবস্থার অবনতি দেখে আজ সকালে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মইনুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাবার দুই পা ও ডান হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনার পর ঢাকায় নিয়ে প্রথম যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, তাতে দেখা যায়, তাঁর পুরো শরীরের ভেতরের অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে, মাথায়ও গুরুতর জখম রয়েছে। এ কারণে এই মুহূর্তে তাঁর বাবা কারও সঙ্গে বেশি কথা বলছেন না। কথা বলতে চাইলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন, আর মাথার আঘাতের কথা বলেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, ৯ মার্চ কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে আবদুল কাদের মির্জা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যকার সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন শ্রমিক লীগের নেতা আলাউদ্দিন। আলাউদ্দিনের বাড়ি জাপা নেতা সাইফুলের বাড়ির পাশাপাশি।

আলাউদ্দিনের নিহতের ঘটনায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার জন্য সাইফুল ইসলামকে চাপ দেন কাদের মির্জা। কিন্তু তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন মির্জা।

গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সাইফুল ইসলামকে বসুরহাট বাজারের কালামিয়া ম্যানশন নামের একটি বিপণিবিতানের সামনে থেকে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তুলে নিয়ে যান। এরপর রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পৌরসভা ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রেখে কাদের মির্জা ও অনুসারীরা সাইফুল ইসলামের হাত-পা বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালান। পরে রাত সাড়ে ১০টায় উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল লতিফকে ডেকে পাঠিয়ে তাঁর কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। সেখান থেকে তাঁকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নিরাপত্তার কারণে ভর্তি না করে একটি বাসায় রাখা হয়। সেই বাসায় থেকে এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন

জেলা জাপার কর্মসূচি

সাইফুল ইসলামের ওপর কাদের মির্জার নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীদের নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে আজ বিকেলে জেলা শহরের জাপা কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভা ডেকেছে দলটি। সভা শেষে শহরের টাউন হল মোড়ে ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন।

আরও পড়ুন