‘কেক আত্মসাতের’ অভিযোগে অধ্যক্ষ বরখাস্ত

বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পাঁচটি কেক কিনেছিলেন বাগধা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহমান। পরদিন ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটি কেক তিনি বাড়ি নিয়ে যান। এ কারণে তখনই তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল কলেজ পরিচালনা পর্ষদ।

বরিশাল জেলার মানচিত্র

বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গত ১৬ মার্চ পাঁচ পাউন্ড ওজনের পাঁচটি কেক কেনা হয়েছিল বরিশালের আগৈলঝাড়ার বাগধা স্কুল অ্যান্ড কলেজে। কলেজের তহবিলের টাকায় কেকগুলো কেনেন অধ্যক্ষ আবদুর রহমান। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপরও ওই দিন কলেজে এসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারটি কেক বিতরণ করে বাসায় ফিরে যান অধ্যক্ষ। তখন অভিযোগ ওঠে, বাকি একটি কেক অধ্যক্ষ বাড়িতে নিয়ে ‘আত্মসাৎ’ করেছেন। এমন অভিযোগ ওঠার ছয় মাস পর ওই অধ্যক্ষকে আজ বুধবার বরখাস্ত করল পরিচালনা কমিটি।

বরখাস্তের ওই সিদ্ধান্ত আজ চিঠির মাধ্যমে অধ্যক্ষ আবদুর রহমানকে জানিয়ে দিয়েছেন পর্ষদের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। এর আগে গত সোমবার কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে হওয়া সভায় সর্বসম্মতিতে অধ্যক্ষকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে সহকারী অধ্যাপক উপেন্দ্র নাথ বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কলেজ পরিচালনা কমিটি ও বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপনের জন্য কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহমান আগেরদিন ১৬ মার্চ পাঁচটি কেক, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোকসজ্জা এবং দুপুরে কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের মধ্যাহ্নভোজের জন্য ২০ হাজার টাকার বাজার করেন। পরদিন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা হওয়ার পর এসব প্রস্তুতি ভেস্তে যায়।

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ নেই। শুধু ১৭ মার্চ কলেজে সারা দিন সময় না দেওয়া ও কেক আত্মসাতের কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি

অধ্যক্ষ আবদুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা হওয়ার পরেও ১৭ মার্চ সকালে কলেজে গিয়ে জাতীয় পতাকা ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শতবর্ষী পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলামের নির্দেশে সব অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়। ওই দিন থেকে জ্বর অনুভব করায় দুপুর ১২টার পর বিষয়টি সভাপতিকে জানিয়ে তিনি কলেজ ত্যাগ করন। পরদিন চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে যান। এর দুই দিন পর কলেজ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সেখানে জানতে চাওয়া হয়, ‘জন্মশতবার্ষিকীতে প্রতিষ্ঠানে সময় না দেওয়া ও একটি কেক আত্মসাতের কারণে কেন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? চিঠিতে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। আমি ২৪ মার্চ বিস্তারিত লিখে চার পৃষ্ঠার জবাব দেই। এরপর আজ জানতে পারি, আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক। বরখাস্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানের পাঁচটির মধ্যে চারটি কেক শিক্ষার্থীদের খাইয়ে পাঁচ পাউন্ড ওজনের একটি কেক অধ্যক্ষ নিজের বাড়িতে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া তিনি ওই দিনের অনুষ্ঠানে কলেজে বেশি সময় দেননি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে (অধ্যক্ষ) বরখাস্ত করা হয়েছে।

‘কেক আত্মসাৎ’ ছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর কোনো অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে সভাপতি বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ নেই। শুধু ১৭ মার্চ কলেজে সারা দিন সময় না দেওয়া ও কেক আত্মসাতের কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।