কেন্দ্র দখল করে গোপন বুথে নৌকার লোকজন, অভিযোগ সাংসদ হারুনের

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠানপাড়া মহল্লায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ হারুনুর রশীদ। বেলা ১১টায় তোলা
ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ। তিনি বলেছেন, বাইরে থেকে লোক এনে কেন্দ্র দখল করে বুথের গোপন কক্ষে লোক রেখে নৌকায় ভোট দেওয়া হচ্ছে। ভোটের নামে তামাশা হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠানপাড়া মহল্লায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ এসব অভিযোগ করেন। আজ সকালে এ পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়।

হারুনুর রশীদ বলেন, ‘ভোটের অনিয়মের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, পুলিশের রাজশাহীর ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে সকাল থেকে কম করে হলেও ১০ বার ফোন দিয়েছি। কিন্তু তাঁরা ফোন ধরেননি। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। পুলিশ ন্যূনতম ব্যবস্থাও নেয়নি।’

সাংসদ আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এ সরকারের অধীন কোনো নির্বাচন হবে না। এ নির্বাচন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আমি মনে করি, সরকার এ স্থানীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে একটি গৃহযুদ্ধের পরিবেশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিএনপি) নজরুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলাম প্রমুখ।

এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ
আজ সকাল আটটায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এতে মেয়র পদে চারজন প্রার্থী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোকলেসুর রহমান, দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী সামিউল হক ও বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সামিউল হক বেলা সোয়া ১১টার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সকাল থেকে আলীনগর উচ্চবিদ্যালয়, নবাবগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়, নয়াগোলা উচ্চবিদ্যালয়, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, হালুয়াবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২০টি কেন্দ্র ঘুরেছি। সব কেন্দ্র থেকেই আমাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র দখল করে গোপন কক্ষে অবস্থান নিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়া হচ্ছে।’

ক্যাপশন ২: চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাঁদলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি। সকাল সোয়া নয়টায় তোলা
ছবি: আনোয়ার হোসেন

সকাল ১০টার দিকে নামোশংকরবাটী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে একটি কক্ষের সামনে থেকে ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষে এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় ছবি তুলতে গেলে বাধা দেন কর্তব্যরত পুলিশের এক কর্মকর্তা। এ বিষয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, গোপন কক্ষে তো কারও থাকার কথা নয়। তিনি এ প্রতিবেদককে সঙ্গে নিয়ে অন্য একটি ভোটকক্ষের সামনে যান। সেখানেও দরজার কাছ থেকেই গোপন কক্ষে থাকা এক যুবককে দেখা যায়। সোহেল রানা পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, তিনি ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া দেখিয়ে দিচ্ছেন। তাঁকে কে এখানে পাঠিয়েছে, তারও কোনো উত্তর তিনি দেননি।

ওই যুবকের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করেননি।

এর আগে সকাল সাতটায় শহরের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক যুবককে বের হতে দেখা যায়। তাঁদের নৌকার প্রার্থী মোখলেসুর রহমানের মালিকানাধীন গ্রামীণ ট্রাভেলসের বাসে উঠতে দেখা যায়। এ সময় কথা হয় আবদুল আওয়াল ও আবদুল হালিম নামের দুজনের সঙ্গে। ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে আবদুল হালিম বলেন, ‘আমরা নাচোল থেকে এসেছি। নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসে রাত্রিযাপন করেছি। এখন বাসে করে বিভিন্ন কেন্দ্রে যাব।’

এ প্রসঙ্গে বেলা দেড়টার দিকে নৌকার প্রার্থী মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমার লোকজন কোনো ভোটকেন্দ্র দখল করেনি। গোপন কক্ষ থেকেও ভোট দেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। এসব বিরোধীদের অপপ্রচার।’

গোপন কক্ষে অবস্থান করে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান বলেন, ‘পাঁচটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে থেকে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু গোপন কক্ষে লোক থেকে ভোট দেওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ পাইনি। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগের ব্যাপারে পুলিশ ও র‌্যাবকে জানিয়েছি। তাঁরা ব্যবস্থা নিয়েছে।’