কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা নেই, অচল আইসিইউ

বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত পিসিআর ল্যাব স্থাপন ও আইসিইউ ইউনিট চালুর দাবি জানিয়েছেন জেলার সচেতন নাগরিকেরা।

কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা নেই করোনা ওয়ার্ডে। তাই রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে বাইরে থেকে সিলিন্ডার কিনে আনতে হয় স্বজনদের। গতকাল পাবনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে
ছবি: প্রথম আলো

পাবনায় প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও জেলায় কোনো পিসিআর ল্যাব স্থাপিত হয়নি। জেনারেল হাসপাতালে তিন বছর আগে যন্ত্রপাতি এলেও চালু হয়নি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ইউনিট। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের কাজ শুরু হয়ে থেমে গেছে মাঝপথে।

বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত পিসিআর ল্যাব স্থাপন ও আইসিইউ ইউনিট চালুর দাবি জানিয়েছেন জেলার সচেতন নাগরিকেরা।

করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই জেলার সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করা হয় রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জে। ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল চাটমোহরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকেই জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন ও আইসিইউ ইউনিট চালুর দাবিতে বিভিন্ন নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে জেলায় ৪৯ হাজার ১৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ১২ জন। গত বছরের শেষ দিকে আক্রান্তের হার কিছুটা কমে এলেও নতুন বছরে এ হার বাড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে ১৯৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রোগী বাড়লেও চিকিৎসাব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ল্যাব ও আইসিইউ ইউনিট চালুর জন্য তাঁরা মন্ত্রণালয়ে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। ডেপুটি সিভিল সার্জন কে এম আবু জাফর বলেন, শুধু পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য তাঁরা ১০ বার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন। এরপরও ল্যাব বসানো সম্ভব হয়নি।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সালেহ মোহাম্মদ আলী বলেন, দ্রুত রোগী শনাক্ত করতে পিসিআর ল্যাব প্রয়োজন। অন্য জেলা থেকে নমুনা পরীক্ষার ফল না আসা পর্যন্ত বোঝা যায় না হাসপাতালে আসা রোগীটি করোনায় আক্রান্ত কি না। এ সময়েই সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে।

জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়। গত বছরের শেষের দিকে রোগী কমতে থাকায় সেখান থেকে ৫০ শয্যা বাদ দেওয়া হয়। বাকি ৫০ শয্যার মধ্যে গতকাল রোববার পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন ১৭ রোগী।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, চার শয্যার আইসিইউ ইউনিট চালুর সব যন্ত্রপাতি এলেও শুধু কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় তা চালু হয়নি। গত বছরের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থার কাজ শুরু করলেও করোনা রোগী কমায় তা বন্ধ রাখা হয়। নতুন করে রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় পুনরায় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের স্বজনেরা জানান, করোনা রোগীর জন্য আইসিইউ খুব জরুরি। কিন্তু যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও শুধু গাফিলতির জন্য ইউনিটটি চালু করা হয়নি। এতে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী ও ঢাকায় ছুটতে হয়। ফলে যাঁরা ভর্তি আছেন, তাঁরা দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, আইসিইউ ইউনিট চালুর জন্য গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থার কাজ শুরু হয়েছে। মাঝে এ কাজে ধীরগতি এলেও এখন দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে আইসিইউ ইউনিট চালু হতে পারে।