কেশবপুরে বাড়িতে বাড়িতে ঘেরের পানি

  • বোরো মৌসুমে মাছের ঘেরের ভেতর ধানের আবাদ করা হবে। এ জন্য ঘের থেকে পানি বের করে দেওয়া হচ্ছে।

ঘরের ভেতর পানি ঢুকে গেছে। তাই মাচার ওপর থাকতে হচ্ছে। গতকাল কেশবপুরের মনোহরনগর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বোরো মৌসুমে মাছের ঘেরের ভেতর ধানের আবাদ করা হবে। এ জন্য ঘের থেকে পানি বের করে দেওয়া হচ্ছে। এতে যশোরের কেশবপুরে দুটি গ্রামে শতাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।

উপজেলার বাগডাঙ্গা ও মনোহরনগর গ্রামের বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। দুই গ্রামের পাশে বিলগুলোয় রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য মাছের ঘের। বছরের ৯ মাস সেখানে মাছ চাষ করা হয়। বোরো মৌসুমের শুরুতে মাছের ঘের সেচ দিয়ে পানি বের করা হচ্ছে।

গতকাল রোববার বাগডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। কারও উঠানে পানি। কারও ঘরে পানি ঢুকেছে। অনেকের বারান্দা ছুঁই ছুঁই করছে। এর মধ্যেই মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

বাগডাঙ্গা গ্রামের দুলালী সরকার (৪২) বলেন, প্রায় চার মাস ধরে পানির মধ্যে বসবাস করছেন। আগে বাড়ির পেছনে পানি ছিল। এখন পানি ঘরে ঢুকছে।

মনোহরনগর গ্রামের গৃহবধূ জয়ন্তী হালদার বলেন, ঘরের মধ্যে পানি ঢুকছে। মাচা করে ঘরের মধ্যে বসবাস করছেন। শৌচাগার ভেসে গিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে।

পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করে ঘেরের পানি সেচ দেওয়া চরম অনৈতিক। আশা করছি, এ সমস্যা দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।
এম এম আরাফাত হোসেন, ইউএনও

গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগডাঙ্গার পূর্ব বিলে আবু সাঈদ ও পশ্চিম বিলে দ্বীন মোহাম্মদ মাছের ঘের করেছেন। ওই ঘেরের কারণে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানার অসংখ্য খাল বন্ধ। বর্ষা মৌসুমে খালের মুখ খোলা থাকে না। ফলে পানি নিষ্কাশিত হতে পারেনি।

মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার পূর্বাংশের ২৭টি বিলের পানি ডায়ের খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়ে বিল খুকশিয়ার আট ফোকর স্লুইসগেট দিয়ে শ্রী নদীতে গিয়ে পড়ে। এ বছর শ্রী নদী পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন হয়নি। এতে ভোগান্তি বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে আবু সাঈদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। আরেক ঘের মালিক দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, তাঁর ঘেরের মধ্যে কোনো খাল নেই। স্লুইসগেটের কাছে শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে ঘেরের পানি সেচ দিয়ে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেশবপুর কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকোশলী মুন্সী আসাদুল্লাহ বলেন, আট ফোকরের পেছনে পলি ভরাট হয়ে গেছে। আর শ্রী নদীও ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানিনিষ্কাশন হচ্ছে না। আট ফোকরের ওপরে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শ্রী নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার খনন না করা না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে কেশবপুর সদরে পানি জমতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

জেলা সমন্বয় সভায় পানিনিষ্কাশনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম আরাফাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করে ঘেরের পানি সেচ দেওয়া চরম অনৈতিক। আশা করছি, এ সমস্যা দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।’