কোটালীপাড়ায় প্রতিমায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগ

কাঠিগ্রাম সর্বজনীন কালী ও দুর্গা মন্দিরে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর মাটিতে পড়ে রয়েছে দুর্গা প্রতিমা। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের কাঠিগ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় একটি দুর্গা মন্দিরের প্রতিমায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা দুর্গা প্রতিমার বাঁশ-কাঠের কাঠামোয় আগুন লাগিয়েছে। পরে কাঠামোটি আগুনে ভস্ম হয়ে প্রতিমা ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তবে পুলিশ আগুনের কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে।

উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের কাঠিগ্রামের কাঠিগ্রাম সর্বজনীন কালী ও দুর্গা মন্দিরে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে প্রতিমায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজ শনিবার ভোরে গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস ওয়াহিদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া উপজেলার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে মন্দির চত্বরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ ঘটনার পর ঘটনাস্থলসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

আমি প্রতিদিনের মতো ভোরে মাকে (দেবী) প্রণাম করতে আসি। এসে দেখি দুর্গা মায়ের প্রতিমাটি পড়ে আছে এবং ওখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি পাড়ার লোকজনকে খবর দিই।
শিখা রানী বাড়ৈ, প্রত্যক্ষদর্শী

মন্দির কমিটির সভাপতি রনদা প্রসাদ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এই মন্দিরে প্রতি বুধবার দিবাগত রাতে হরিসভা এবং শুক্রবার দিবাগত রাতে গণেশ পাগলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে অনুযায়ী আমরা গতকাল শুক্রবার রাতে এই মন্দিরে সভা করি। রাত একটায় আমরা সভা শেষ করে মন্দিরে তালা মেরে সবাই চলে যাই। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে শিখা রানী বাড়ৈ নামে পাড়ার এক নারী মন্দিরে প্রণাম করতে গিয়ে দুর্গা প্রতিমায় আগুন দেখতে পেয়ে আমাদের খবর দেন। আমি ভোর পাঁচটায় মন্দিরে গিয়ে দেখি, দুর্গা মূর্তিটি পড়ে আছে। সেখান থেকে হালকা ধোঁয়া উড়ছে। মন্দিরের সামনে কাঠের চটা দিয়ে বেড়া দেওয়া এবং সেখানে তালা দেওয়া ছিল। প্রতিমা যে কাঠামোয় ছিল, সেখানে পেছনের দিক থেকে আগুন দেওয়ায় কাঠামো পুড়ে যায়। একপর্যায়ে মূর্তি সামনের দিকে পড়ে যায়। আমরা এসে আগুন নিভিয়ে ফেলি। আমাদের ধারণা, দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে রনদা প্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘আমাদের মন্দিরে দুর্গা ও কালীপূজা করার পর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় না। সারা বছর রেখে পূজা করা হয়।’

প্রত্যক্ষদর্শী শিখা রানী বাড়ৈ বলেন, ‘আমি প্রতিদিনের মতো ভোরে মাকে (দেবী) প্রণাম করতে আসি। এসে দেখি দুর্গা মায়ের প্রতিমাটি পড়ে আছে এবং ওখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি পাড়ার লোকজনকে খবর দিই।’

কাঠিগ্রাম সর্বজনীন কালী ও দুর্গা মন্দিরে প্রতিমায় অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের কাঠিগ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

কাঠিগ্রাম গ্রামের দীপক বাড়ৈ ও শংকর বাড়ৈ বলেন, ‘আমাদের ধারণা, রাত দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে আগুন দিয়েছে। সর্বজনীন দুর্গা ও কালীমন্দিরের তিন পাশে ইটের দেয়াল। পেছনের দেয়ালে একটা ছিদ্র বা ফাঁকা রয়েছে। সেখানে একটা লাঠি পাওয়া গেছে। ওই লাঠির মাথায় কিছু প্যাঁচানোর চিহ্ন রয়েছে। আমাদের ধারণা, ওই লাঠির মাথায় কিছু পেঁচিয়ে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় প্রতিমায়। ভোর পাঁচটা নাগাদ প্রতিমার কাঠামো আগুনে ভস্মীভূত হয়ে শুধু ধোঁয়া উড়তে থাকে।’

কোটালীপাড়া ইউএনও ফেরদাউস ওয়াহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই মন্দিরে কোনো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। তবে মূর্তি আগুনে পুড়েছে এবং ভেঙে পড়েছে। এ আগুনটা কীভাবে লাগল, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্ত করছে। আশা করি প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে।’

কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। তদন্ত করে সঠিক ঘটনা উদ্‌ঘাটন করা হবে।’

এদিকে দুপুরে মন্দির কমিটির সভাপতি রনদা প্রসাদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, সহসভাপতি মুজিবুর রহমান হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, পৌর মেয়র হাজি মো. কামাল হোসেন শেখ, পিঞ্জুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ছাইদ শিকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ কোটালীপাড়া শাখার সভাপতি কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, যেকোনো মূল্যেই হোক কোটালীপাড়া উপজেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা হবে।