ক্রেতাকে ভেতরে বসিয়ে দোকান বন্ধ, পুলিশ চলে গেলেই খুলছে

কঠোর বিধিনিষেধের ১১তম দিনে রংপুর নগরের বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাটের শাটার অর্ধেক খুলে রেখে বেচাকেনা চলে। রোববার সকালে নগরের বেতপট্টি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কঠোর বিধিনিষেধের ১১তম দিনে রংপুরের ব্যবসাপ্রধান এলাকায় আজ রোববার সকালে একটু একটু করে দোকানপাট খুলতে শুরু করে। তবে পুলিশের তৎপরতা বেড়ে গেলে তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ চলে গেলে এসব দোকানপাট আবারও খোলা হয়।

এদিকে সড়কেও অন্য দিনের তুলনায় আজ বেশি যান চলাচল করতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে মানুষের উপস্থিতিও বেড়েছে। নগরের প্রধান সড়কে চার্জার রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার প্রাধান্য ছিল বেশি। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলও চলাচল করতে দেখা যায়।

প্রধান সড়ক ছাড়াও পাড়ামহল্লার সড়কগুলোতেও চলছে যানবাহন। তবে সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বেড়ে গেলে যানবাহন চলাচলও কমে যায়। নগরের কাচারিবাজার, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়ে পুলিশের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়। জেলা পরিষদ সুপারমার্কেটের সামনে থেকে গ্র্যান্ড হোটেল মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার প্রধান সড়কের কিছু স্থানে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারিকেড দিয়ে ওয়ানওয়ে সড়ক করা হয়েছে। এসব স্থানে পুলিশ মাঝেমধ্যে গাড়ি আটকিয়ে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

শহরের বেতপট্টি এলাকায় দেখা যায়, দোকানের মালিক-কর্মচারীরা একটি শাটার খুলে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করেন। ক্রেতা এলে ভেতরে বসিয়ে শাটার নামিয়ে দেওয়া হয়। অধিকাংশ দোকানেই এভাবে কার্যক্রম চলে। মাঝে পুলিশের টহল দল ওই এলাকায় এলে দোকান পুরোপুরি বন্ধ, চলে গেলে আবার খোলা হয়।

প্রতিদিনের মতো রোববারও সড়কে পুলিশের পক্ষ থেকে গাড়িতে করে মাইকে প্রচার চালাতে দেখা যায়। এতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। এর মাঝেই নিত্যপণ্যের বাজারে মানুষের ভিড় দেখা যায়। তবে এসব বাজারে স্বাস্থ্যবিধি ছিল তুলনামূলক কম।

রংপুর নগরে প্রবেশের ২০টি স্থানে বসেছে পুলিশের তল্লাশিচৌকি। এসব স্থানের মধ্যে আছে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, সাতমাথা, শালবন মোড়, জিলা স্কুল মোড়, পায়রা চত্বর, শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পার্ক মোড়, মডার্ন মোড়।

পায়রা চত্বর এলাকায় কথা হয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, গাড়ি বের করলেও যাত্রী পাওয়া যায় কম। তাতে খুব একটা আয়রোজগার হয় না। আর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার আলতাব হোসেন বলেন, দিন দিন করোনার প্রকোপ বাড়ছে। কিন্তু ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষকে তা বোঝানোই যাচ্ছে না।

নীলফামারীতে পশুর হাট
এদিকে কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে নীলফামারীর কোথাও কোথাও বসছে কোরবানির পশুর হাট। আজ রোববার সকালে জেলা শহরের মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজ মাঠ ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশে হাট বসে। এতে গাদাগাদি করে চলে কেনাবেচা। প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাট এলাকায় উপস্থিত থাকলেও দুটি হাটই চলে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত।

নীলফামারীতে বসা পশুরহাটে ছিল না স্বাস্থ্যবিধি। রোববার সকালে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশে
ছবি: প্রথম আলো

হাটসংশ্লিষ্টরা জানান, সপ্তাহে রবি ও বুধবার হাট বসে। অন্যান্য পণ্য বড় বাজারে কেনাবেচা হলেও পশুর হাট বসে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশে। কোরবানির পশু কেনাবেচা বেড়ে যাওয়ায় বাস টার্মিনালের অদূরে মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজ মাঠেও হাট বসেছে।

হাটের ইজারাদার মাহাবুল ইসলাম বলেন, হাট বন্ধের বিষয়ে কোনো লিখিত নির্দেশনা পাননি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হাট বসিয়েছেন। তবে বেলা সোয়া একটার দিকে জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার সব হাটবাজার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নীলফামারীর পশুর হাট বন্ধ করার জন্য সেখানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠানো হয়েছে।

রোববার জেলার জলঢাকা পশুর হাট ও টেংগনমারী পশুর হাট বসে। গতকাল শনিবার বসেছিল জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ পশুর হাট। এসব হাটে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ভিড় লক্ষ করা যায়। হাটে আসা বেশির ভাগ মানুষের মুখে ছিল না মাস্ক। কারও কারও মাস্ক ছিল থুতনির নিচে।