ক্রেতার অভাব আড়তে, বাগানে পচছে আম

ক্রেতার অভাবে আড়তে পড়ে আছে আম। আজ সোমবার বেলা ১১টায় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার চাপোড় গ্রামে।
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা থেকে পাইকার আসার কথা। এ জন্য কয়েক দিন থেকে বাগানে ঘুরে ঘুরে আম সংগ্রহ করেছেন মো. জাহিদ। কিন্তু চার দিন থেকে পাইকারের কোনো খোঁজ নেই। পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও সড়কের গুয়াগাঁও মহল্লার জাহিদের আড়তে এখন আম্রপালি আম পচে যাচ্ছে। জাহিদ বলেন, ‘পচা আম বেছে সরিয়ে রাখছি। কিন্তু আমের পচন ঠেকানো যাচ্ছে না।’

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও লকডাউনের কারণে ক্রেতা না পাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে পীরগঞ্জের হাজারো আমচাষি-ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়েছেন। অনেকে পুঁজি হারাতে বসেছেন। ক্রেতা না থাকায় আড়তে আম পচে নষ্ট হচ্ছে, পেকে গেলেও বাগান থেকে নামানো যাচ্ছে না আম। অনেকেই গত বছরের চেয়ে এবার অর্ধেকেরও কম দামে আম বিক্রি করছেন।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, পীরগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় ১৫-১৬ বছর থেকে উপজেলায় উৎপাদন হচ্ছে আম্রপালি আম। এর সঙ্গে হিমসাগর, হাড়িভাঙাসহ অন্যান্য জাতেরও কিছু আবাদ আছে। এ বছর জুন মাস থেকে বাগানের আম নামানো শুরু হয়েছে। জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে চলছে ভরা মৌসুম, যা চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে।

উপজেলার মসলন্দপুরের গুলজার হোসেনের ছয় বিঘার আমবাগান আছে। তিনি বলেন, ‘পাঁচ–ছয় দিন আগে বাগানের আংশিক আম কেটে বিক্রির জন্য মসলন্দপুর আড়তে দিয়েছি। সিলেটের ক্রেতা আসার কথা। তিন দিন থেকে আড়তে কোনো পাইকার আসছেন না, আমার আমও বিক্রি হচ্ছে না। এ জন্য আমার প্রায় ১০ হাজার টাকার আম্রপালি আমে পচন ধরেছে।’

গত বছর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বাগানের ভালো মানের আম্রপালি প্রতি মণ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বছর পাইকাররা সেই আমের মণপ্রতি দাম বলছেন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজেন্দ্রনাথ রায় বলেন, কৃষি বিভাগের তালিকা অনুযায়ী, উপজেলায় প্রায় ৯৮০ হেক্টর জমিতে আম্রপালি আমের বাগান রয়েছে। আমবাগানের সংখ্যা ১৩৮। এ জমিতে এ বছর আমের ফলন হয়েছে ১৫ হাজার ৬৮০ মেট্টিক টন। বেসরকারি হিসাবে, এলাকায় অনেক বেশি জমিতে আমবাগান রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত আমচাষিদের সুযোগ–সুবিধা প্রদান ও বাজারজাতকরণে সরকারি সহযোগিতার দাবিতে গত ৩০ জুন উপজেলা পরিষদের ফটকে মানববন্ধন হয়। উপজেলা আমবাগান সমিতির ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম, পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক, বাগানমালিক আবু জাহিদসহ ১১ জন বক্তব্য দেন। এই দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আমচাষিরা স্মারকলিপিও দেন।

উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের আম ব্যবসায়ী আবদুর রউফ বলেন, যেখানে গত বছর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বাগানের ভালো মানের আম্রপালি প্রতি মণ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ এ বছর পাইকাররা সেই আমের মণপ্রতি দাম বলছেন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। একটু খারাপ মানের আম প্রতি মণের দাম ৬০০ টাকার বেশি বলেন না।

আম বহনে ট্রাক বন্দোবস্তকারী মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘লকডাউনের অজুহাতে ঢাকাসহ সব জায়গায় ট্রাকভাড়া বেশি চাওয়া হচ্ছে। দেড় মাস আগে পীরগঞ্জ থেকে সিলেটের ট্রাকভাড়া ছিল ২৮ হাজার টাকা। অথচ এখন ৩৪ হাজার টাকার কমে ভাড়া যেতে চায় না।’

ভেলাতৈড় গ্রামের আমবাগানের মালিক জসিমউদ্দীন ও এক্তিয়ারপুর গ্রামের রইছ উদ্দীন বলেন, পীরগঞ্জের মানুষ ১৫-২০ বছরের চুক্তিতে জমি ভাড়া নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে আম্রপালি ও অন্য জাতের বাগান করেছেন। তাঁরা বাগানের পেছনে অনেক টাকা খাটিয়েছেন। এ বছর উপজেলায় ২৫-২৬ হাজার বিঘা জমিতে আমের আবাদ করা হয়েছে। আমের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর উৎপাদন খরচ উঠিয়ে অনেক লাভের মুখ দেখছিলেন চাষি-ব্যবসায়ীরা। কিন্ত সঠিক সময়ে বাগানের আম দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতে না পারায় আম নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তাঁরা। আমের দাম নেই, পচে নষ্ট হচ্ছে। কয়েকজন ছাড়া আশানুরূপ ব্যবসায়ী না আসায় চাষিরা এবার আমের বাজার নিয়ে হতাশ।