ক্ষতিপূরণ বেশি পেতে রাতারাতি বাড়ি

বিমানবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপনে জমি অধিগ্রহণের খবরে ফসলি জমিতে তোলা হচ্ছে ঘর। গত বৃহস্পতিবার বাবুগঞ্জের মানিককাঠি এলাকায়।  প্রথম আলো
বিমানবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপনে জমি অধিগ্রহণের খবরে ফসলি জমিতে তোলা হচ্ছে ঘর। গত বৃহস্পতিবার বাবুগঞ্জের মানিককাঠি এলাকায়। প্রথম আলো

ছিল ফসলি জমি, ডোবা, নালা। কয়েক মাসের ব্যবধানে সেখানে তোলা হয়েছে টিনের ঘর, পাকা বাড়ি। ঘরবাড়িগুলো তোলা হয়েছে গাদাগাদি করে। কোনোটাতে ঢোকার পথও নেই। এ ঘটনা বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের মানিককাঠী এলাকায়।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ওই এলাকায় বিমানবাহিনীর ঘাঁটি করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। সে জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জমির ক্ষতিপূরণ বেশি পেতে তড়িঘড়ি করে সেখানে বাড়িঘর তুলছেন লোকজন। এসব ঘরের মালিকেরা মোটা টাকা খরচ করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে হোল্ডিং নম্বরও করাচ্ছেন।

জানতে চাইলে রহমতপুর ইউপির চেয়ারম্যান সরোয়ার মাহমুদ বলেন, ‘সম্প্রতি বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা ওই জায়গা পরিদর্শন করে গেছেন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বেজ ক্যাম্পের জন্য নির্ধারিত জায়গায় স্থাপনা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। অনেকে হোল্ডিংয়ের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে আসতে থাকেন। প্রথম দিকে বিষয়টি বুঝে উঠতে পারিনি। তাই কয়েকজনকে হোল্ডিং নম্বর দিয়েছি। পরে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাই। তিনি নতুন করে হোল্ডিং নম্বর না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর থেকে আর দেওয়া হচ্ছে না।’

প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, মানিককাঠী এলাকায় বিমানবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপনের জন্য সাড়ে তিন বছর ধরে জায়গা নির্ধারণের কার্যক্রম চলছে। তবে এখনো জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়নি। দ্রুত জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা চলছে—এমন খবরে গত তিন-চার মাস ধরে নির্ধারিত এলাকাজুড়ে একের পর এক ছোট-বড় স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে সেখানে দুই শতাধিক ঘর উঠে গেছে। এখনো ঘর তোলা চলছে। অভিযোগ আছে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের ইন্ধনে বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় এসব ঘর তোলা হচ্ছে।

>

মানিককাঠী এলাকায় বিমানবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপনে জমি অধিগ্রহণ করবে সরকার
এমন খবরে সেখানে রাতারাতি ঘর তোলার হিড়িক পড়েছে

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, ‘সবাই যে যাঁর জমিতে ঘর তুলছেন। তাঁদের দেখাদেখি আমিও তুলছি। শুনেছি, জমি অধিগ্রহণ হবে। ঘরবাড়ি থাকলে তার আলাদা মূল্য ধার্য করা হয়, এমন সুবিধা নিতে সবাই এটা করছে। তবে আমরা এখনো কোনো নোটিশ পাইনি।’

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, বরিশাল বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশে মানিককাঠী এলাকায় ফসলি জমিতে অন্তত ২০০ ঘর তোলা হয়েছে। কেউ ইট টিয়ে দেয়াল করে আবার কেউ টিনের ছাউনি দিয়ে যেনতেনভাবে এসব ঘর তুলেছেন। ঘরগুলো এমনভাবে গাদাগাদি করে তোলা হয়েছে, সেগুলোয় ঢোকার পথও রাখা হয়নি।

ওই স্থানে ঘর তুলেছেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখানে আমার পরিবার ও বংশের প্রায় ২০ একর জমি রয়েছে। শুনেছি, এই জমি সরকার বিমানবাহিনীর ঘাঁটি করার জন্য অধিগ্রহণ করবে। তবে এখনো এ-সংক্রান্ত কোনো নোটিশ পাইনি। খবর পাওয়ার পর এখানে যাঁদের জমি আছে সবাই ঘরদোর করছেন।’

একই এলাকায় পাকা বাড়ি করেছেন সাবিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘শুনেছি এই জমি অধিগ্রহণ হবে। এ জন্য বাড়ি করেছি। এখন যদি অধিগ্রহণ না-ও হয়, এখানে বসবাস করব।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকায় বিমানবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপনের জন্য ১৫৮ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করে একটি প্রস্তাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হবে।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা এরই মধ্যে অধিগ্রহণের জন্য প্রাথমিক কাজের অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত জমির সবকিছু ভিডিও করে এনেছি। এরপর কেউ ঘরবাড়ি কিংবা অন্য স্থাপনা নির্মাণ করলেও লাভ হবে না। এতে অতিরিক্ত কোনো সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’