ক্ষতিপূরণের অধিক অর্থ পাওয়ার আশায় তড়িঘড়ি করে চলছে বহুতল ভবন নির্মাণ

চার লেন মহাসড়ক নির্মানের জন্য চলছে ভূমি অধিগ্রহ। অধিক অর্থ পাওয়ার আশায় নতুন করে সেই ভূমিতে তড়িঘড়ি করে তৈরি করা হচ্ছে বহুতল ভবন।মঙ্গলবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মহাসড়কের ধোপাকান্দী এলাকায়প্রথম আলো

সাউথ এশিয়া সাব–রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্প-২ বাস্তবায়ন করতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন মহাসড়কের জন্য সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকাসহ মহাসড়কটির পাশে থাকা বিভিন্ন এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এসব অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে থাকা বহুতল ভবন, ঘরবাড়ির মূল্য ভূমির মালিককে বুঝিয়ে দিয়ে সেগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেই সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ভূমিমালিক অধিক অর্থ পাওয়ার আশায় নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তড়িঘড়ি করে গড়ে তুলছেন বহুতল ভবনসহ নানা রকম স্থাপনা। আবার একটি অসাধু চক্র অনেক পুরোনো ভবনেও নতুন করে রং মাখিয়ে নতুন ভবনের সমপরিমাণ অর্থসহায়তা পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সাসেক প্রকল্প-২ সূত্রে জানা গেছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই চার লেন মহাসড়কের নির্মাণকাজ চলছে। ২০২৪ সাল নাগাদ প্রকল্পটির কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। মহাসড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ মানচিত্রের মধ্যে কোনো ভূমিতে নতুন করে কোনো ধরনের ভবন, স্থাপনা নির্মাণ না করার জন্য প্রকল্প এলাকায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

চার লেন মহাসড়ক নির্মানের জন্য চলছে ভূমি অধিগ্রহ। এ জন্য এসব এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের কাজ স্থগিতের নির্দেশ রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে নতুন কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করারও নির্দেশ। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে অধিক অর্থ পাওয়ার আশায় নতুন করে তড়িঘড়ি চলছে বহুতল ভবন নির্মাণ। মঙ্গলবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মহাসড়কের ধারে
প্রথম আলো

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায় নির্মাণাধীন চার লেন মহাসড়কটির পাশে বেশ কিছু এলাকায় দেখা যায়, গণবিজ্ঞপ্তির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই চলছে এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ। স্থানীয় ধোপাকান্দি গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, লাভের আশায় তড়িঘড়ি করে এসব ভবন নিম্নমানের উপাদান দিয়েই তৈরি করা হচ্ছে। যে কারণে এসব ভবনের সবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়গুলোতে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।

আমডাঙ্গা গ্রামের মানিক মিয়া বলেন, ভূমির পাশাপাশি প্রতিটি ভবনের জন্য সরকারের মূল্য নির্ধারণ করা আছে। অনেক টাকা পাওয়ার আশায় আসলে এই ভবনগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এমনিতেই অধিক হারে ভূমি ও ভবনের জন্য ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সরকার। এই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও জানান তিনি।

অধিক অর্থ পাওয়ার আশায় অনেক পুরোনো ভবন নতুন করে রং করে নবনির্মিত ভবনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মহাসড়কের ধারে

হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকার আইয়ুব আলী বলেন, এসব ভবন তৈরি করতে খরচ কমাতে অনেক ক্ষেত্রেই রডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ। আবার নামমাত্র সিমেন্ট ব্যবহার করা হলেও সেটি নিম্নমানের। একই সঙ্গে অধিক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে বালু।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে হাটিকুমরুল মহাসড়কের পাশে বহুতল ভবন নির্মাণকারী আল-আমিন বলেন, অধিক টাকা পাওয়ার জন্য আসলে এই ভবন নির্মাণ করা হয়নি। এই মহাসড়কে এর আগেও তাঁদের বাড়ির জায়গা চলে গেছে। এখন মহাসড়কের পাশের এই জায়গা আগেই কেনা থাকায় সেখানে তাঁরা বহুতল ভবনটি নির্মাণ করছেন।

বেশি করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে থেমে নেই ছোট ছোট ভবন নির্মাণকাজও। মঙ্গলবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মহাসড়কের ধারে
প্রথম আলো

জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় বলেন, গণবিজ্ঞপ্তি জারির পরও যদি কোনো জমির মালিক নতুন করে অসৎ উদ্দেশ্যে স্থাপনা নির্মাণ করে থাকেন, তবে তাঁর জন্য কোনো অতিরিক্ত অর্থ ছাড় দেওয়া হবে না।

সাসেক প্রকল্প পরিচালক ওয়ালিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকায় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অসৎ উদ্দেশ্যে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করলেও সরকারি অর্থ লোপাটের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে প্রকল্প কর্তাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে বলেও জানান তিনি।