কয়রায় একই পরিবারের তিনজনকে হত্যায় আদালতে একজনের স্বীকারোক্তি

খুন
প্রতীকী ছবি

খুলনার কয়রায় একই পরিবারের তিনজনকে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার আট আসামির মধ্যে আবদুর রশিদ গাজী নামের একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় মো. হাবিবুল্লাহকে (৩৬)। খুনের সময় তা দেখে ফেলেন তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম (৩২) ও মেয়ে হাবিবা সুলতানা (১২)। এ জন্য তাঁদের দলবদ্ধ ধর্ষণ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তিনজনের লাশ গুম করতে পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।

আবদুর রশিদ গাজীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান। আজ সোমবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে ওই খুনের ঘটনার বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন তিনি।

গ্রেপ্তার আটজন হলেন আবদুর রশিদ গাজী, সাইফুল ইসলাম, আল আমিন হোসেন, আসলাম সরদার, আবদুল ওহাব, তাসলিমা, শামীমুল ইসলাম ও মোস্তফা কামাল। তাঁদের মধ্যে আবদুর রশিদ গাজী ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন। গত শনিবার তাঁকে যশোরের অভয়নগর থেকে আটক করা হয়। তিনি গতকাল রোববার দুপুরে কয়রা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

খুনের সময় তা দেখে ফেলেন তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম (৩২) ও মেয়ে হাবিবা সুলতানা (১২)। এ জন্য তাঁদের দলবদ্ধ ধর্ষণ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

গত বছরের ২৬ অক্টোবর সকালে কয়রা উপজেলার বামিয়া গ্রামের একটি পুকুর থেকে মো. হাবিবুল্লাহ, তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম ও মেয়ে হাবিবা সুলতানার লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁদের মধ্যে হাবিবুল্লাহর হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। আর বিউটি বেগম ও হাবিবা সুলতানার মুখে ও কপালে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুকুরের পাশেই তাঁদের বাড়ি। ওই ঘটনায় হাবিবুল্লাহর মা মোছা. কোহিনুর বেগম বাদী হয়ে কয়রা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ জানায়, মামলাটি ছিল মূলত ‘ক্লুলেস’।

এর পরদিন নিহত হাবিবুল্লাহর প্রতিবেশী মো. জিয়াউর রহমান, মোছা. রাজিয়া সুলতানা, মো. রহমান, খালেকসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ও রাজিয়া সুলতানাকে তিন দিন করে রিমান্ডে নিলেও তাঁদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মূলত জিয়াউর রহমান ও রাজিয়া সুলতানার মধ্যে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় হাবিবুল্লাহকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়, বলছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের জবাব দেননি পুলিশ সুপার মাহবুব হাসান। তবে হত্যাকাণ্ডের সময় ছয়জন ছিলেন বলে তাঁরা ধারণা করছেন। পুলিশ সুপার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি, পুলিশের পেশাদারি ও বিভিন্ন সোর্স কাজে লাগিয়ে আবদুর রশিদ গাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নতুন সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। মূলত বিকৃত যৌন লালসা, প্রতারণামূলক আর্থিক লেনদেন ও পরকীয়া সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে হত্যাকাণ্ডটি দলবদ্ধভাবে সংগঠিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

মাহবুব হাসান বলেন, প্রথমে স্থানীয় থানা-পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করছিল। কিন্তু ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে পরবর্তী সময়ে তা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাটির তদন্ত করছে।