কয়লাখনি উত্তরে, বিদ্যুৎকেন্দ্র দক্ষিণে

আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা। পরামর্শদাতা জাইকা ও টেপকো বিদ্যুৎ ও কয়লা ব্যবসায়ও যুক্ত।

দেশের পাঁচটি কয়লাখনির সব কটিই উত্তরাঞ্চলে। অথচ ২০ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় সব কটিই দক্ষিণাঞ্চলে। ফলে দেশের কয়লা দিয়ে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার সুযোগ কম। এগুলো চলবে বিদেশ থেকে আনা কয়লা দিয়ে।

খনিমুখে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো না হওয়ার পেছনে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থ কাজ করেছে বলে মনে করছেন একাধিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলে বঙ্গোপসাগর ভূকৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কয়লা খালাসের গভীর সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারসহ দক্ষিণাঞ্চলে একের পর এক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

এসব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনার অংশ। জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ২০১০ সালে এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে জাপানেরই প্রতিষ্ঠান টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো)। মহাপরিকল্পনায় প্রথমে ২০১০ সালে ৩০ বছর মেয়াদি ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়, যার ৩৫ ভাগই কয়লাভিত্তিক। ৬ বছর পর এটি সংশোধন করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের পরিমাণ কমিয়ে ২৫ ভাগ করা হয়।

২০১০ সালে মহাপরিকল্পনার কিছুদিন পর জাইকা কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কয়লা খালাসের জন্য একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। একই সঙ্গে সেখানে তারা চার হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ঋণ প্রস্তাব দেয়। সরকার দুটি প্রস্তাবেই রাজি হয়।

বর্তমানে মাতারবাড়ীতে জাইকার অর্থায়নে কয়লাবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। আর তার পাশেই জাপানি ঋণে দুই হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যৌথভাবে জাপানের সুমিতোমো করপোরেশন, তোশিবা করপোরেশন ও আইএইচআই করপোরেশন কাজ করছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাইকা একাধারে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, আবার ব্যবসা করার জন্য বন্দর নির্মাণ করবে, আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগও করছে। এটি স্বার্থের দ্বন্দ্ব। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরূল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সব কটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দক্ষিণাঞ্চলে। অথচ দেশের সব কয়লাখনি উত্তরাঞ্চলে। খনির উৎসমুখে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা গেলে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কয়লার ব্যবসা যারা করতে চায়, তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই খনিমুখে বিদ্যুৎকেন্দ্র করার পরিকল্পনা করা হয়নি। কারণ, সরকারি ব্যবস্থাপনায় কয়লা উত্তোলন করা হলে সেখানে দেশি ও বিদেশি কমিশনভোগীরা কোনো ভাগ পাবে না।

বদরূল ইমামের প্রশ্ন, জাইকা যদি নিজে কয়লাবন্দর ও কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করে, তাহলে তাদের মহাপরিকল্পনা কেন করতে দেওয়া হলো? আসলে জাইকা এমনভাবে মহাপরিকল্পনা করল, যাতে তারা তাদের ব্যবসাটাই করতে পারে।

এই মহাপরিকল্পনার অধীনে একে একে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিও হয়। এসব কেন্দ্রের প্রায় সবই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। জাইকার নির্মাণাধীন বন্দর ব্যবহার করে বিদেশ থেকে কয়লা এনে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে ১৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের স্থান চিহ্নিত হয়েছে। প্রায় সব কটির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরুও হয়েছে। ১৬ কেন্দ্র থেকে আসবে ১৫ হাজার ৭৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

১৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে কক্সবাজারে ৪টি, পটুয়াখালীতে ৪টি, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম ও ঢাকার অদূরে মেঘনাঘাটে ২টি করে এবং মুন্সিগঞ্জে ১টি ও দিনাজপুরের দীঘিপাড়ায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের। দীঘিপাড়া ছাড়া ১৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লাখনি থেকে বহুদূরে। ফলে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চলবে আমদানি করা কয়লা দিয়ে। ইতিমধ্যে পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। এটি ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা কয়লা দিয়ে চলছে। বহুল আলোচিত বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার কথা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এটিও আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলবে। আর এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা খালাস হবে জাইকার অর্থায়নে নির্মিত মাতারবাড়ী কয়লাবন্দর থেকে। জাপানের গণমাধ্যম এটিকে গভীর সমুদ্রবন্দর বলছে।

টেপকোকে বাদ দেওয়ার আহ্বান

সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, সরকার ১০ বছর পর এসে বুঝতে পেরেছে বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা জাপানের জাইকা এমনভাবে করেছে, যাতে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়। সে কারণে মহাপরিকল্পনা সংশোধন করবে সরকার।

এদিকে বাংলাদেশ, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের ৫০টি নাগরিক সংগঠন ও জলবায়ু আন্দোলনকারী প্ল্যাটফর্ম আগামী দিনে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা সংশোধন প্রক্রিয়ায় জাপানি প্রতিষ্ঠান টেপকোকে পরামর্শক হিসেবে আর বিবেচনা না করার দাবি জানিয়েছে। এ দাবি জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ুসংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে গত ২০ আগস্ট এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। একই সঙ্গে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাইকার প্রেসিডেন্ট এবং টেপকোর প্রেসিডেন্টের কাছেও চিঠিটি পাঠানো হয়।

সংগঠনগুলোর যুক্তি, বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে টেপকোর গুরুতর স্বার্থের সংঘাত রয়েছে, যে কারণে তাকে মহাপরিকল্পনার সংশোধনকাজে সংযুক্ত করা যায় না।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশের সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), সুশাসনের জন্য প্রশাসন (সুপ্র), নাগরিক সংহতি, গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান প্রভৃতি। এ ছাড়া জাপান সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি (জ্যাকসেস), ফ্রেন্ডস অব আর্থ জাপান, উর্গেওয়াল্ড জার্মানি, অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল ইউএস, গ্রোথওয়াচ ইন্ডিয়া, এনজিও ফোরাম অন এডিবি প্রভৃতি বিদেশি সংগঠন চিঠিতে সই করে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনাবিষয়ক কর্মজোটের সদস্যসচিব হাসান মেহেদী বলেন, টেপকো একাধারে বিদ্যুৎ খাতের নীতি প্রণয়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত। এটা গুরুতর স্বার্থের সংঘাত। নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কখনো একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান করতে পারে না।

বিকল্পও ছিল

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী দেশের পাঁচটি কয়লাখনিতে মোট কয়লার মজুত প্রায় ৩০০ কোটি টন। এর মধ্যে তিনটি খনির সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে, যার একটি দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা উত্তোলনও হচ্ছে। বাকি দুটির মধ্যে একটি দিনাজপুরের দীঘিপাড়া, অন্যটি ফুলবাড়ী। এসব খনিমুখে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা গেলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়।

বিদেশি কনসোর্টিয়াম ১ হাজার ৭০০ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, দীঘিপাড়ার কয়লার মান খুবই উন্নত। সে কারণে পরিবেশের ক্ষতির মাত্রা খুবই কম হবে। পরিবেশ নষ্ট হয়, এমন কাজ সরকার করবে না। যদি পরিবেশ রক্ষা করে খনি করা সম্ভব হয়, তবেই দীঘিপাড়া থেকে কয়লা উত্তোলন করা হবে
নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের দীঘিপাড়ায় পাওয়া কয়লার আর্দ্রতা কম। এতে সালফারও কম, যা উন্নত মানের কয়লা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। প্রায় ৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় এ কয়লার অস্তিত্ব রয়েছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩২০ মিটার থেকে ৫০৬ মিটার গভীরতায় কয়লার মজুত রয়েছে ৭০৬ মিলিয়ন টন বা ৭০ কোটি ৭০ লাখ টন। এর মধ্যে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করলে ৩০ বছরে ৯ কোটি টন কয়লা উত্তোলন করা যাবে। খনিমুখে এ কয়লা দিয়ে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

দীঘিপাড়া খনির কয়লার মজুত ও তা উত্তোলনের পদ্ধতি ঠিক করতে ২০১৭ সালের মে মাসে জার্মানির দুটি ও অস্ট্রেলিয়ার একটি কোম্পানি মিলে গঠিত কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি সই হয় সরকারি প্রতিষ্ঠান বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল)।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি কনসোর্টিয়াম ১ হাজার ৭০০ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, দীঘিপাড়ার কয়লার মান খুবই উন্নত। সে কারণে পরিবেশের ক্ষতির মাত্রা খুবই কম হবে। পরিবেশ নষ্ট হয়, এমন কাজ সরকার করবে না। যদি পরিবেশ রক্ষা করে খনি করা সম্ভব হয়, তবেই দীঘিপাড়া থেকে কয়লা উত্তোলন করা হবে।

দিঘিপাড়ার মতো ফুলবাড়ীতে পাওয়া কয়লার মানও উন্নত। কিন্তু প্রায় শতভাগ বিদেশি মালিকানায় তোলা কয়লা বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। এর সঙ্গে খননপদ্ধতি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভও ছিল। সব মিলিয়ে আন্দোলন এবং সরকারের অনাগ্রহের কারণে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী কয়লাখনি প্রকল্প আর এগোচ্ছে না।

ফুলবাড়ী কয়লাখনি নিয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির তিনটি দাবি হলো, উন্মুক্ত খননপদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না, বিদেশে কয়লা রপ্তানি করা যাবে না এবং বিদেশি কোম্পানির মালিকানায় কয়লা উত্তোলনও করা যাবে না।

এই তিন দাবিতে সেখানে আন্দোলনও গড়ে ওঠে। আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট তৎকালীন বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) গুলিতে তিন গ্রামবাসী নিহত হন, আহত হন দুই শতাধিক। এ আন্দোলনে সমর্থন দেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তখন ফুলবাড়ীর সমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি ঘোষণা করেন, ক্ষমতায় গেলে উন্মুক্ত খননপদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করবেন না।

অন্য দুটি খনি জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে ও রংপুরের খালাসপীরে। এগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি। ফলে সেখানে কী পরিমাণ কয়লা আছে ও তা উত্তোলনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, তা জানা নেই সরকারের।

মহাপরিকল্পনায় অসংগতি

বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় বাংলাদেশে ২০২১ সালে ২৪ হাজার, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার এবং ২০৪০ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরই মধ্যে চাহিদার দ্বিগুণ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। এ কারণে ক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র না চালিয়ে অলস বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে সরকারের লোকসান বাড়ছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) তথ্যমতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত বেসরকারি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের কেন্দ্রগুলোকে ৬১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা কেন্দ্রভাড়া বা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখার মাশুল এভাবেই দিতে হচ্ছে সরকারকে।

একাধিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দেশের শিল্পকারখানা না বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার উচিত হয়নি। কয়েক বছরের মধ্যে দেশে বিদ্যুতের বড় রকমের চাহিদা তৈরি হবে, তেমন পরিস্থিতিও দেশে নেই। এ পরিস্থিতিতে নির্মাণাধীন আমদানিনির্ভর জ্বালানি দিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন বিদেশি ঋণ বাড়াবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম প্রথম আলোকে বলেন, দেশীয় কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে কম দামে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, আমদানিতে খরচ হবে না হাজার হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সরকারের বর্তমান নীতি হলো কয়লা উত্তোলন না করা। এই নীতির পরিবর্তন করা না হলে দীঘিপাড়া কয়লাখনিতে যত ভালো কয়লাই থাকুক, তাতে কোনো লাভ নেই।