নারায়ণগঞ্জে খননে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে শীতলক্ষ্যা

গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কেন্দ্রীয় খেয়াঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বছরের পর বছর দখলে সংকীর্ণ হওয়া নদীতীর খননে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে শীতলক্ষ্যা। ইতিমধ্যে অবৈধ দখলমুক্ত করে সেখানে নদীর প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা ১০৫ ফুট খনন (প্রশস্ততা) করা হয়েছে।

এভাবে সংকীর্ণ শীতলক্ষ্যা নদীতীরের আরও দুই কিলোমিটার এলাকা খনন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এতে নদীর প্রাণ ফিরে পাওয়ার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ নৌ চ্যানেলটি সচল হয়ে উঠবে। তবে পরিবেশবাদীদের দাবি, ব্রিটিশ আমলের মাপ অনুযায়ী নদীর জায়গা ফেরত চান তাঁরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ, মালবাহী কার্গোসহ শত শত নৌযান চলাচল করছে। ঘাটের দুই তীরে (পূর্ব ও পশ্চিম) শত শত নৌকা নোঙর করে রাখা হয়েছে। এতে নদীর জায়গা সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। মাঝনদী পর্যন্ত নৌকা রাখতে দেখা গেছে। নৌযানগুলো ঝুঁকি নিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করতে দেখা গেছে।

এদিকে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে এক নম্বর সেন্ট্রাল খেয়াঘাট এলাকা–সংলগ্ন এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ ভেকু দিয়ে নদীতীরের মাটি খনন করে অপসারণ করছে। এতে নদীর দেড় কিলোমিটার এলাকায় নদীর প্রশস্ততা বেড়েছে আরও ১০৫ ফুট। নদীতীর বাঁধাই করে গাছ লাগানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ আরও আড়াই কিলোমিটার এলাকার নদীতীরের মাটি অপসারণ করা হবে।

৪০ বছর ধরে সেন্ট্রাল খেয়াঘাট এলাকায় নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন মাঝি ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, ‘নদীর ভরা যৌবন দেখেছেন তাঁরা। নদীর প্রশস্ততা সাড়ে ৬০০ ফুটের ওপরে ছিল। দখল ও কাঁচপুর সেতু হওয়ার পর ধীরে ধীরে শীতলক্ষ্যা নদীর প্রশস্ততা ও স্রোত কমতে থাকে।’

তোরাব আলী বলেন, ‘আগে শীতলক্ষ্যা নদীর স্বচ্ছ পানি মানুষ পান করত, এখন শীতলক্ষ্যার পানি থেকে পচা দুর্গন্ধ ছড়ায়। এখন সেই পানি আগের মতো নেই, নদীও নেই।’

বন্দর এলাকার বাসিন্দা দেওয়ান সাগর বলেন, ‘মৃতপ্রায় শীতলক্ষ্যাকে বাঁচাতে নদীর প্রশস্ততা বাড়ানোর সঙ্গে খননও করতে হবে। দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে।’

পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা গুরুত্বপূর্ণ নৌ চ্যানেল। কিন্তু বছরের পর বছর দখল ও ভয়াবহ দূষণের কবলে মরতে বসেছে শীতলক্ষ্যা। নদীর নাব্যতা বাড়ানো এটা আমাদের বহুদিনের দাবি ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ আমলের মাপ অনুযায়ী নদীর জায়গা ফেরত চাই। এটা না করা পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা তার যৌবন ফিরে পাবে না।’

বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল বলেন, শীতলক্ষ্যার প্রশস্ততা ছিল ২৬৫ ফুট। নদীতীর খনন করে দেড় কিলোমিটার এলাকা নদীর তীরের আরও ১০৫ ফুট প্রশস্ততা বেড়ে ৩৭০ ফুট হয়েছে। সিএসডি খাদ্যগুদাম থেকে মেরিন টেকনোলজি পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা নদীতীর খনন করে মাটি অপসারণ ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি করা হবে।

শেখ মাসুদ কামাল বলেন, ১৯৬০ সালের নদীর যে মূল প্রশস্ততা ছিল, বিআইডব্লিউটিএ সেই প্রশস্ততা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।