গ্রামের এক কারখানায় আখের গুড় হচ্ছে ৬০ বছর ধরে

ঝিনাইদহের খন্দকবাড়িয়া গ্রামে এক বিঘা জমির ওপর আখের গুড়ের কারখানাটির অবস্থান।

আখের রস জ্বালিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়। সম্প্রতি শৈলকুপার খন্দকবাড়িয়া গ্রামে
প্রথম আলো

চুলার ওপর টগবগ করে ফুটছে আখের রস। পাশাপাশি রয়েছে ছয়টি চুলা। রস লাল হয়ে এলে এক চুলা থেকে চলে যাচ্ছে আরেক চুলায়। এভাবেই তৈরি হচ্ছে আখের গুড়। এ চিত্র পাড়াগাঁয়ের এক কারখানার। প্রায় ৬০ বছর ধরে ওই কারাখানায় গুড় তৈরি করা হচ্ছে।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার খন্দকবাড়িয়া গ্রামে এক বিঘা জমির ওপর আখের গুড়ের কারখানাটির অবস্থান। ওই গ্রামের দুই ভাই রেজাউল ইসলাম (৫০) ও মিজানুর রহমান (৪৬) কারখানার মালিক। তাঁরা নিজেরাই গুড় তৈরি করেন। তাঁদের বাবা কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ কারখানার গুড় এলাকার লোকজন পিঠা-পায়েস, সেমাই-সুজিসহ মিষ্টি খাবার তৈরিতে ব্যবহার করেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বড় ভাই রেজাউল ইসলাম যন্ত্রের সাহায্যে আখ থেকে রস বের করছেন। আর ছোট ভাই মিজানুর রহমান সে রস পাত্রে করে নিয়ে চুলায় দিচ্ছেন। পাশাপাশি ছয়টি চুলায় আগুন জ্বলছে।

কবির হোসেন ও মোশারফ হোসেন নামের দুই কৃষক খেতের আখ কেটে নিয়ে এসেছেন গুড় তৈরির জন্য। এ গুড় তাঁরা বাড়িতে ব্যবহার করবেন।

মিজানুর রহমান বলেন, তাঁর বাবা আবদুর রাজ্জাক আখের চাষ করতেন। সে সময় অনেকে নিজ নিজ বাড়িতে রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রি করতেন। ১৯৬৫ সালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মোবারকগঞ্জ চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁদের বাড়ি থেকে ওই চিনিকলের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। এর দু-তিন বছর আগেই কারখানা তৈরি করে তাঁর বাবা বাড়িতে গুড় তৈরি শুরু করেন।

মিজানুর রহমান বলেন, আগে গরু দিয়ে আখমাড়াইয়ের কল চালানো হতো। এখন শ্যালো মেশিনের ফিতা চালিয়ে রস বের করা হয়। এরপর মাটির চুলায় রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করা যায়। এক প্রান্তে মাড়াইয়ের যন্ত্র, আরেক প্রান্তে গুড় তৈরির চুলা। রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য চুলাগুলো একটি চালার নিচে করা হয়েছে।

সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এ কারখানায় গুড় তৈরি করা হয়। প্রতি ১০ কেজি আখ থেকে ১ কেজি গুড় পাওয়া যায়। প্রতি কেজি আখের দাম চার টাকা। এ হিসাবে এক কেজি গুড় তৈরি করতে ৪০ টাকার আখ প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া শ্যালো মেশিনের খরচ, মজুরি খরচ মিলিয়ে ৬০ টাকা ব্যয় হয় এক কেজি গুড় তৈরিতে, বাজারে যার দাম ৮০ টাকা।

মিজানুর রহমান বলেন, আগে তাঁরা মাসে প্রায় ৪০০ কেজি গুড় তৈরি করেছেন। বর্তমানে ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি গুড় তৈরি করছেন। প্রতিবছর চার মাস গুড় তৈরি করেন।

রেজাউল ইসলাম বলেন, এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে আখ কিনে তাঁরা গুড় তৈরি করেন। পরে সে গুড় বাজারে বিক্রি করেন। আবার অনেকে আখ নিয়ে এসে গুড় তৈরি করে নিয়ে যান।

কারখানায় আখ নিয়ে গুড় তৈরি করতে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন। তিনি বলেন, পরিবারের পুরো বছরের মিষ্টির চাহিদা পূরণে আখ চাষ করেন। এখান থেকে গুড় তৈরি করে টিনের পাত্রে রেখে দেবেন।