খাওয়ার পানির সংকটে রমজানে বাড়বে দুর্ভোগ

জেলায় তিন বছরে পানির স্তর তিন ফুট নিচে নেমে গেছে। পৌরসভার গভীর নলকূপে না ওঠায় সরবরাহের লাইনে পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জ পৌর এলাকায় দুই-তিন মাস ধরে খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সরবরাহের লাইনে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে বাজার থেকে পানি কিনছেন। পৌর কর্তৃপক্ষ নতুন করে নলকূপ স্থাপনের কাজ করছে। বেশি সংকট দেখা দিয়েছে, এমন এলাকাগুলোতে রমজানে ভ্রাম্যমাণ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শিবগঞ্জ পৌরসভার প্রায় সব এলাকাতেই এই সংকট চলছে। পৌর মেয়র সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বলেছেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেই পানির সংকট। মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে। সমাধানের জন্য ছয়টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। পানির সরবরাহ লাইন বসানোর দরপত্র আহ্বান করা হবে।

তবে মনিরুল ইসলাম বলেন, এসব প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। তাই সোমবার (আজ) থেকে পিকআপ ভ্যানে পানির ট্যাংক বসিয়ে বেশি সংকট আছে, এমন এলাকাগুলোতে খাওয়ার পানি সরবরাহ করা হবে। এতে চাহিদা কতটুকু পূরণ হবে, তা বলা যাচ্ছে না।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন, জেলায় গত তিন বছরে পানির স্তর তিন ফুট নিচে নেমে গেছে। কৃষিকাজে ব্যাপকভাবে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার হওয়ায় ও বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সদর, শিবগঞ্জ উপজেলায় ১০০ ফুটের কম গভীরতার নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না।

গত শুক্রবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চাঁদলাই জোড়বাগান বস্তি এলাকায় সরবরাহ লাইনের উন্মুক্ত একটি পানির ট্যাপ থেকে পানি সংগ্রহ করতে দেখা যায় বস্তির নারীদের। লাইনে দাঁড়িয়ে একে একে পানি সংগ্রহ করছিলেন তাঁরা। সেলিনা বেগম, নাসিমা খাতুন নামে দুজন বলেন, এই ট্যাপ থেকে প্রায় ১০০ পরিবার পানি সংগ্রহ করে। সবার বাড়িতেই পানির লাইন নেওয়া আছে। কিন্তু সেগুলোতে পানি পাওয়া যায় না।

সেলিনা, নাসিমারা যেখান থেকে পানি সংগ্রহ করছিলেন, সেখানকার পানির ট্যাপটির ক্ষেত্রে বিকল্প উপায় অবলম্বন করা হয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন মাটির নিচে পৌরসভার পানি সরবরাহের পাইপ পর্যন্ত খুঁড়ে সেই পাইপে ট্যাপ লাগিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও পানিপ্রবাহের চাপ কম।

চাঁদলাই গ্রামের বাসিন্দা আলী আকবর (৬০) বলেন, এই এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বাস। প্রায় ৫০০ বাড়িতে সাবমারসিবল পাম্পসহ নলকূপ বসিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থায় পানির চাহিদা মেটানো হয়। বাকিরা পানির জন্য হাহাকার করেন। সামনে রমজান মাসে সমস্যা আরও প্রকট হবে।

পৌর মেয়র মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, গভীর নলকূপগুলোর মধ্যে কয়েকটির মেশিন চালু করলেও পানি উঠছে না। মহানন্দা নদীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় শোধনাগারে চাহিদামতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি না হলে পানির স্তর বাড়বে না। এখন তাই বৃষ্টি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।