খাগড়াছড়িতে উচ্ছ্বাসে শুরু হওয়া ভোট উত্তাপে শেষ
খাগড়াছড়ি পৌরসভার ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছিল শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে। সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছিল ভোটারদের দীর্ঘ সারি। তবে উচ্ছ্বাসের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে উত্তাপের মধ্য দিয়ে। দুপুরের পর শহরের একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় জড়িয়ে পড়েন দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকেরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা করতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রফিকুল আলমের সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কেন্দ্রগুলোতেও। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই ভোট গ্রহণ শেষ হয়।
আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পার্বত্যাঞ্চলের এই পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হয়। এবারই প্রথম এই পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন আগেই পৌরসভার ১৮টি ভোট কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এই জন্য সব কটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থা ছিল। ভোটকেন্দ্রের বাইরে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের উপস্থিত ছিল চোখে পড়ার মতো।
শেষবেলায় উত্তাপ
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শালবন এলাকায় অবস্থিত টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে দুপুরের পর উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এই নারী ভোটকেন্দ্রের সামনে দুপুরের পর অবস্থান করছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রফিকুল আলম। সঙ্গে ছিলেন কর্মী-সমর্থকেরাও। একই কেন্দ্রের বাইরে সামনের রাস্তায় ছিলেন নৌকা প্রতীকের নেতা-কর্মীরাও। বেলা দুইটার দিকে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের প্রবেশ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় রূপ নেয়। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ভোট না দিয়ে ঘরে ফিরে যান।
দুই পক্ষের সমর্থকদের এই পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ছত্রভঙ্গ করতে ঘটনাস্থলে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা করে। পরে র্যাব-বিজিবি ঘটনাস্থলে হাজির হয়।
মেয়র প্রার্থী মো. রফিকুল আলম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর সমর্থক নারী ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দিচ্ছিলেন। ভোট দিলে পরে হামলা ও মারধরের হুমকি দিতে থাকেন। তাঁর কর্মীরা এর প্রতিবাদ করলে তাঁদের হামলা করে নৌকা প্রতীকের লোকজন।
বেলা আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বিপুল সদস্যের উপস্থিতি। ভোটার ছাড়া কাউকে কেন্দ্রের সামনে দাঁড়াতে দিচ্ছিলেন না। এর মধ্যে কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রার্থী মো. রফিকুল আলম।
বেলা তিনটায় এই কেন্দ্রে আসেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী। সেখানে থাকা মেয়র প্রার্থী রফিকুল আলম হামলার বিষয়ে নির্মলেন্দু চৌধুরীকে অবহিত করেন। এই সময় নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, তিনি এ ধরনের ঘটনা সমর্থন করেন না।
জানতে চাইলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শাহজাহান খান বলেন, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হচ্ছে। কেন্দ্রের বাইরে কী হয়েছে, তা তাঁর জানা নেই।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৪০ জন ও ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার রয়েছেন ৩৭ হাজার ৮৭ জন।
ইভিএম নিয়ে দ্বিধা, এরপরও উচ্ছ্বাস
পৌরসভার সাতটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সব কটি কেন্দ্রে নারী-পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ সারি ছিল। এসেছিলেন বয়স্ক ব্যক্তিরাও।
বেলা সাড়ে ১১টায় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে যায়, দুটি ভবনে ভোট নেওয়া হচ্ছে। একটিতে নারী ও অন্যটিতে পুরুষ ভোটারদের কেন্দ্র। নারী ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বেলা ১১টা পর্যন্ত ১ হাজার ৩৪১ ভোটের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই চিত্র দেখা যায়। তবে অনেক ভোটারদের দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হয়। তাঁরা জানান, ভোট নেওয়া হচ্ছে ধীরগতিতে।
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মঈন উদ্দীন আহমদ বলেন, অনেক বয়স্ক ভোটারের আঙুলের ছাপ মিলছিল না। ফলে ভোট নিতে একটু সময় লেগেছে।
একই কেন্দ্রে নাতিদের কাঁধে ভর করে ভোট দিতে এসেছেন ৮০ বছর বয়স্ক ধনা চাকমা। ভোট দিতে পেরে তিনি খুশি বলে জানান।
বিএনপি প্রার্থী মো. ইব্রাহিম খলিল দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হচ্ছে। তবে ভোট নেওয়ার হার অনেক ধীরগতি। নির্বাচনের ফল পাল্টে দিতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।